পুলিশকে দিয়ে জুতার ফিতা বাঁধালেন মন্ত্রী

দেহরক্ষী পুলিশ সদস্যকে দিয়ে জুতার ফিতা বাঁধিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নমন্ত্রী রচপাল সিং। তার এ কর্মকাণ্ডে সমালোচনার পাশাপাশি অপসারণের দাবিও উঠেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন-এ এসেছিলেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী রচপাল। রামকিঙ্করের ছবিতে মালা দেওয়ার পরে জুতা রাখার স্থানে গিয়ে দাঁড়ান তিনি। এ সময় তার সরকারি দেহরক্ষী নিচু হয়ে বসে বাঁ পায়ে লাল-কালো রঙের জুতা পরিয়ে এর ফিতা বেঁধে দেন।

ঘটনাটি টেলিভিশনের ক্যামেরায় স্পষ্ট ধরা পড়ে। পরে তা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

কেন পুলিশ সদস্যকে দিয়ে জুতা পরালেন— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, তার পিঠে ব্যথা থাকায় নিচু হতে পারছিলেন না। এ জন্য ওই দেহরক্ষী তাকে জুতা পরিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে ওই পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে অন্য পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, ভিআইপিরা অনেক সময়ই সরকারি রক্ষীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত চাকরের মতো ব্যবহার করেন। নির্দেশ অমান্য করলে বদলি ছাড়াও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে বলে বিষয়টি তারা চেপে যান।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে নিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে চাকরের মতো ব্যবহার বহুদিন ধরে চলে আসা একটি প্রথা। এ সময় রচপালের এ আচরণকে ‘মানবতার প্রতি অবমাননাকর’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রচপালের এ আচরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিবৃতি দাবি করেছেন কংগ্রেসের বিধানসভার সদস্য মানস ভূঁইয়া। বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘তৃণমূল রাজ্য পরিচালনা করছে না। নবাবী কায়দায় শাসন করছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে রচপালের আচরণে।’

সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য তো মন্ত্রীর অপসারণ দাবি করেছেন। দলটির অপর নেতা আনিসুর রহমান বিষয়টি মঙ্গলবার বিধানসভায়ও তুলেছেন। বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাজেট বিতর্ক চলাকালীন ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’ তুলে তিনি বলেন, ‘একজন সিনিয়র মন্ত্রী সরকারি কর্মীকে দিয়ে নিজের জুতার ফিতা বাঁধাচ্ছেন। টিভিতে সেটা দেখানো হচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব?’

এ সময় তাকে থামিয়ে দেন জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে আগে নোটিশ দিতে হয়। নিয়ম না মেনে বাজেট আলোচনার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে নিয়মভঙ্গ করছেন বাম বিধায়ক।’

এ নিয়ে দুই পক্ষের সদ্যদের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচিও হয়।

এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের আচরণ নতুন কিছু নয়। অনেক ভিআইপি তো দেহরক্ষীদের দিয়ে তাদের জুতাও বহন করান। এ ধরনের কাজ দেহরক্ষীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই করে থাকেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৪ সালে এক পুলিশ সদস্যকে দিয়ে জুতা পরানোর অভিযোগ উঠেছিল জম্মু-কথুয়া রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি শাকিল বেগের বিরুদ্ধে। তার ছেলে ইন্টারনেটে এ ঘটনার ছবি পোস্ট করলে সমালোচনার মুখে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই