পুরুষের উর্বরতা বাড়াতে পারে এই ব্যায়ামটি

বিবাহিত পুরুষমাত্রই সুখী একটি পরিবারের কল্পনা করেন। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় জায়গা করে নেয় একটি সন্তানের স্বপ্ন। কিন্তু আপনি যদি দিনের বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসে কাটিয়ে দেন, তা অফিসে হোক অথবা বাড়িতে- আপনার কিছুটা সক্রিয় হবার সময় এসে গেছে। কারণ ব্যায়াম আপনার শুক্রাণুর মান বাড়াতে পারে, ফলে বাড়তে পারে একটি সুস্থ সন্তানের পিতা হবার সম্ভাবনা।

কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার উপকারে আসতে পারে? Reproduction জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়, মাঝারি মাত্রার কার্ডিও এক্সারসাইজ, যেমন জগিং আপনার শুক্রাণুর গতি, আকৃতি, এবং ঘনত্বের উন্নতি ঘটাতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম শরীরের ওপর বিভিন্ন মাত্রার প্রভাব রাখে।

ইরানে ছয় মাস ব্যাপী একটি গবেষণা চালানো হয় এই ব্যাপারে। এক্ষেত্রে ২৬১ জন পুরুষকে বেছে নেওয়া হয় যাদের জীবনযাত্রায় ব্যায়ামের কোনো চিহ্ন ছিলো না। তাদেরকে বিভিন্ন মাত্রার ব্যায়াম করতে বলা হয়। দেখা যায়, ব্যায়ামের ফলে সবারই ওজন, শরীরে মেদের পরিমাণ এবং কোমরের মাপ কমে আসে। তবে যারা মাঝারি মাত্রায় ব্যায়াম করেছিলেন, তাদের শুক্রাণুর মান সবচাইতে ভালো হতে দেখা যায়।। আর এই ব্যায়ামের উপকারিতাও তারা ভোগ করেন সবচাইতে বেশি সময় ধরে। তাদের শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় ৮% এরও বেশি। স্পার্ম মোটিলিটি বা গতি বৃদ্ধি পায় ১২%, মর্ফোলজি ১৭% এবং স্পার্ম সেলের সংখ্যা ছিলো ব্যায়াম না করা ব্যক্তিদের চাইতে ২২% বেশি। ব্যায়াম বন্ধ করার এক সপ্তাহের মাঝে এসব সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। মোটিলিটি আগের অবস্থায় ফিরে যায় এক মাসের মধ্যে।

এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বেহজাদ হাজিজাদেহ মালেকি একটি প্রেস রিলিজে জানান, “আমাদের ফলাফল বলছে শুক্রাণুর মান বাড়ানোর খুব সাধারণ, সস্তা এবং কার্যকরী একটি উপায় হতে পারে ব্যায়াম।”

গবেষণায় জানা যায়নি কেন মাঝারি মানের ব্যায়ামটাই এক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো। তবে গবেষক মালেকি ধারণা করেন এই ধরনের ব্যায়াম শুক্রাশয়ে কম স্ট্রেস এবং প্রদাহ তৈরি করে।

অনেকেই ধরে নেন সন্তান ধারণে অক্ষমতার পেছনে শুধুই নারী দায়ী। এই আধুনিক যুগেও অনেকে তাই মনে করেন। কিন্তু আমেরিকায় দেখা যায় প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নারীর সন্তান ধারণে অক্ষমতার পেছনে কারণ হলো তার সঙ্গীর শুক্রাণুর নিম্ন মান। শুধু তাই নয়, গর্ভপাতের ঝুঁকিও বাড়ায় এই ব্যাপারটি। ধূমপান, মাদকের ব্যবহার, মদ্যপান এবং পরিবেশগত দূষণ শুক্রাণুর মান নষ্ট করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ইনফেকশন এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশনের মত চিকিৎসাগুলোও শুক্রাণুর নিম্ন মানের জন্য দায়ী হতে পারে।

মেল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটির জন্য চিকিৎসা আছে বটে, কিন্তু সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক অর্থসাপেক্ষ এবং অস্বস্তিকর। এ কারণে শুক্রাণুর মান উন্নয়নে প্রথমেই ব্যায়াম শুরু করা উচিত, জানান ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের মেন’স ক্লিনিক এর ডিরেক্টর ডক্টর জেস মিলস।

জুলাইতে প্রকাশিত এক ভিডিওতে ড. মিলস জানান, ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসা, সনা, হট টাব এবং হট ইয়োগা এড়িয়ে চলা উচিত পুরুষদের। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখা উচিত সবজি ও ফল এবং ২-৩ কাপ কফি।

তবে ব্যায়াম করলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা নয়। কিছু মানুষ পিতা হতে পারেন না স্পার্ম কাউন্টের কারণে, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার সমাধানে কাজে আসতে পারে ব্যায়াম। এর পরেও সন্তান ধারণে সক্ষম না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো।



মন্তব্য চালু নেই