পুরুলিয়ার গ্রামে পাওয়া গেল প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো রহস্যময় তন্ত্রের পুথি

বাড়ির মানুষ জানতেন, এই এলোমেলো কাগজের স্তূপ মোটেই বাজে জিনিস নয়। তাই কয়েক প্রজন্ম ধরে তাঁরা তত্ত্বাবধান করে আসছিলেন এগুলির। পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি থানার মুরাডি গ্রামের সেন পরিবারে গত ৩০০ বছর ধরে রক্ষিত রয়েছে বেশ কিছু রহস্যময় পুথি। তার সন্ধান এবং পরিচয় সম্প্রতি খুঁজের বের করলেন স্থানীয় প্রত্ন-উৎসাহী মাধবচন্দ্র মণ্ডল।
মুরাডির সেন পরিবারের বর্তমান সদস্য গৌতম সেন জানিয়েছেন, তাঁর ঠাকুরদা এই পুথিগুলিকে নিয়মিত রোদে দিতেন। ফলে এগুলি আজও পাঠযোগ্য রয়েছে। কেবল পুথিগুলির পাতা এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় জানা যেত না এগুলি ঠিক কীসের পুথি। পুথিগুলিকে সম্প্রতি খতিয়ে দেখে বোঝা যাচ্ছে এগুলি তন্ত্রের। আজ থেকে ৩০০ বছর আগে বাংলায় তন্ত্র সাধনার এক বিশেষ জোয়ার এসেছিল। রামপ্রসাদ সেন সেই আমলেরই তন্ত্রসাধক। কিন্তু প্রত্যন্ত রাঢ় অঞ্চলে তন্ত্রচর্চার ইতিহাস সেভাবে জানা যায় না।

মাধবচন্দ্র মণ্ডল ও গৌতম সেন। ছবি সজল মণ্ডলের সৌজন্যে
সেন পরিবাবের ভদ্রাসনের পাশেই প্রাচীন মন্দির শ্রীরঘুনাথ জিউ-র। ১২৩৩ বঙ্গাব্দে এই মন্দির নির্মিত হয়। এই সুপ্রাচীন মন্দির ও বাড়িতে দুর্লভ তন্ত্রপুথির সহাবস্থানের ব্যাপারটা বেশ রহস্যময় বলেই মনে করছেন এলাকার বিদ্বজ্জন। পুথিগুলি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, সেগুলিতে তন্ত্রের ক্রিয়া কর্মাদির উল্লেখ রয়েছে, রয়েছে তথাকথিত ‘ডার্ক’ বিষয়ও। অর্থাৎ মারণ-উচাটন ইত্যাদি ক্রিয়ার নির্দেশও রয়েছে সেখানে। সেই সঙ্গে রয়েছে পরিচিত ও অপরিচিত বেশ কিছু দেবদেবীর পূজাপদ্ধতি। পুরনো বাংলা হরফে সংস্কৃতভাষায় লিখিত এই পুথিগুলি থেকে পাওয়া যেতে পারে এক লুপ্ত ইতিহাসের সন্ধান।
প্রসঙ্গত, তন্ত্র-গবেষকদের একাংশের ধারণা এই প্রকার যে, প্রত্যন্ত রাঢ় অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে তন্ত্র ও স্থানীয় উপজাতি-রহস্য সাধনা পরস্পরের সঙ্গে পৃক্ত হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। এই পুথিগুলি সেদিকেও আলো ফেলতে পারে।
সেন পরিবার এই পুথিগুলির যথাযথ সংরক্ষণ চাইছেন এই মুহূর্তে।



মন্তব্য চালু নেই