পুরী গিয়ে যে ১০টি কাজ ভুলেও করবেন না

পুরীতে একটি জিনিস গ্যারান্টি সহকারে পাওয়া যায়। সেটি হল বাঙালি। পর্যটকেরা তো বটেই, পাণ্ডা থেকে দোকানদার, হোটেলের ম্যানেজার-বয় হয়ে রিকশচালক, সকলেই বাংলা বলেন গড়গড়িয়ে। অর্থাৎ, সেকেন্ড হোম। আর এই মনোভাব থেকেই যাবতীয় বিপত্তির সূত্রপাত পুরীতে। বহু বাঙালি পর্যটক পুরীতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কী ধরনের সমস্যায় তাঁরা পড়েছেন, তা আলোচনার অবকাশ এই প্রতিবেদনে নেই। কিন্তু বেড়াতে গিয়ে ঝামেলায় পড়া কি আদৌ কাম্য? জেনে নিন, পুরীতে গিয়ে যে ১০টি কাজ না-করলে আপনি দিব্য ঘুরতে পারবেন।

১. কখনওই মজা করে ওড়িয়া ভাষায় কথা বলতে যাবেন না। পুরীর ওড়িয়ারা অনর্গল বাংলা বলেন ঠিকই, কিন্তু নিজেদের ভাষার প্রতি তাঁদের ভালবাসা সাংঘাতিক (এবং সেটাই স্বাভাবিক)। অনেক বাঙালি পর্যটকই বাংলা শব্দের পিছনে ‘অ’ বসিয়ে ওড়িয়া বলার ছেলেমানুষি করেন। এটা কিন্তু পুরীর মানুষ মোটেই ভালভাবে নেন না।

২. পুরীতে গিয়ে মন্দিরে অবশ্যই পুজো দেবেন। নিজের পাণ্ডার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। পুরী হল মন্দিরের শহর। শ্রীজগন্নাথ দেবের মন্দির ছাড়াও পুরীর অলিতেগলিতে মন্দির পাবেন। সর্বত্র পুজো হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রণামি চাওয়া হয়। এতে বিরক্ত হয়ে কোনও কথা বলে ফেলবেন না।

৩. জগন্নাথের মন্দিরের ভিতরে বহু ছোটখাটো মন্দির রয়েছে। সেখানেও এই একই ব্যাপার। টাকা দেওয়ার হলে দেবেন। না-দেওয়ার হলে দেবেন না, চুপচাপ চলে যাবেন। কথা বাড়াবেন না। তর্কাতর্কি তো কখনওই নয়। বেগতিক দেখলে ক্ষমা চেয়ে নেবেন, তা-ও ভাল। কিন্তু জল গড়াতে দেবেন না।

৪. পুরীতে গিয়ে একান্ত অবসরে মদ্যপান করতে চান? করতেই পারেন। হোটেল বা হলিডে হোমের ভিতরে সাধারণত মদ্যপানে কোনও বাধা নেই। কিন্তু ভুলেও বিচে বসে মদ্যপান করবেন না। এটা কিন্তু পুরীতে মোটেই ভালভাবে নেওয়া হয় না। আইনি ঝামেলায় ফেঁসে যেতে পারেন।

৫. পুরীর কোনও হোটেলে দুপুর বা রাতের খাবার খেতে গেলে, মেনু আগেভাগে ভাল করে জেনে নিন। এই হোটেলগুলিতে বিভিন্ন ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। কী খাবেন, কত টাকা তার দাম, সেটা জেনে খান। কারণ, অনেকেই মনে করেন, পুরীতে খাবার সস্তা। আদপেও তা নয়। ফলে ধারণার বশবর্তী না হয়ে জেনে নিলে পরে তর্কাতর্কির অবকাশ থাকে না। কোথাওই দাম না-জেনে খাবেন না।

৬. পুরীর বিচের ধারে দেখবেন খাবারের ছোট ছোট একাধিক স্টল রয়েছে। সেখানে মাছ থেকে কাঁকড়া, পাওয়া যাচ্ছে হরেক কিসিমের খাবার। ভুলেও খাবেন না। পেট খারাপ হলে বেড়ানোই মাটি।
৭. ভুলেও বলবেন না, ‘‘রসগোল্লা বাংলার খাবার’’। হালফিলে রসগোল্লা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার তুমুল টানাপড়েন শুরু হয়েছে। ওড়িশার মানুষের কিন্তু রসগোল্লা সেন্টিমেন্ট মারাত্মক। পুরীও ব্যতিক্রম নয়।

৮. পুরীতে গিয়ে কেনাকাটা করবেন নিশ্চয়ই? চেষ্টা করুন বড় দোকান থেকে কেনাকাটা সারতে। ছোট দোকান খারাপ, এমন অবশ্যই নয়। কিন্তু দামের ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ হেরফের ঘটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দরদস্তুর করে নিন। ওড়িশা সরকারের একাধিক বিপণী রয়েছে। যেতে পারেন সেখানেও।

৯. পুরীতে রিকশাভাড়া চড়া, এটা মাথায় রাখুন। রিকশওয়ালাদের সঙ্গে পর্যটকদের হামেশাই ছোটখাটো গোলমাল তৈরি হয় এই কারণে। কিন্তু ভাড়া বেশি, এটা আগেভাগে মাথায় রাখলে সমস্যা হবে না।

১০. এবং সবশেষে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। পুরীতে যত্রতত্র রাস্তায় (সমুদ্রে তো কখনওই নয়) প্রস্রাব করবেন না। কেননা, কোনটা মন্দিরের দেওয়াল, আর কোনটা হোটেলের, সেটা বাইরে থেকে চট করে বোঝা কঠিন। আপনি হয়তো জানেনই না, দেওয়ালের ওপারে কোনও ছোট্ট মন্দির রয়েছে।

এ জন্য পর্যটকদের কীভাবে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে, তার সাক্ষী এই প্রতিবেদক স্বয়ং। অতএব, এইটি মেনে চলুন। স্বর্গদ্বারে ওড়িশা সরকার শৌচালয় তৈরি করেছে। যথেষ্ট পরিষ্কার এবং বড়। অন্য কোথাও পেলে কাছাকাছি হোটেলে জেনে নিন। তাঁরাই আপনাকে বলে দেবেন।



মন্তব্য চালু নেই