পুরনো কলমে বানানো ঢাকার তাজমহল

প্রায় ৪’শ বছর আগের কথা। সম্রাট শাজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজ বেগমের স্মৃতির প্রতি সম্মান স্বরুপ কুড়ি হাজার শ্রমিককে ১৬ বছর দিনরাত খাটিয়ে স্ত্রীর কবরের উপর নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল। এই তাজমহল বানাতে এশিয়ার নানান জায়গা থেকে দামি আর দুর্লভ উপাদান জোগার করতে সম্রাট ব্যবহার করেছিলেন প্রায় ১০ হাজার হাতি। পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যের সাক্ষী হয়ে তাজমহল আজও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে সৌন্দর্যপ্রেমীরা ছুটে আসেন যমুনা নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত তাজমহলের রুপ দেখতে।

কিন্তু তাজমহলের এই সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতে হবে ভারতের আগ্রা শহরে। কিন্তু পাসপোর্ট-ভিসা আর অর্থনৈতিক চক্কর পেড়িয়ে সবার পক্ষে সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায় না তাজমহল দেখতে যাওয়া। আর এই সাধ আর সাধ্যের সম্মিলন ঘটালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাথী ওয়াজেদুল ইসলাম ওয়াজেদ। ফেলে দেয়া পুরনো কলম দিয়ে নিজের দৃষ্টিনান্দনিকতার উপর ভিত্তি করে তিনি তৈরি করেছেন আগ্রার তাজমহল। হয়তো ওয়াজেদুলের তাজমহলের পাশে যমুনা নদী নেই, কিন্তু শৈল্পিক নিপুনতা আর সৃজনশীলতা দিয়ে যমুনার অভাব মিটিয়ে দিয়েছেন তিনি এক লহমায়।

ওয়াজেদ সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ১৭১ নাম্বার রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। নিজের স্বপ্নকে পরিপূর্ণতা দিতে শুধু তাজমহল বানিয়েই ক্ষান্ত দেননি তিনি। ফেলে দেওয়া কলম থেকে তৈরি করেছেন নৌকা, পাখি, ডুপ্লেক্স বাড়ি, ফুল, ফুলদানি, কলমদানি ইত্যাদি। আর এগুলো সে তৈরি করেছে কলেজে পড়া অবস্থায়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হলেও ওয়াজেদ খুব সুন্দর ছবি আকেন। এস এম হলের রিডিং রুমের প্রত্যকটি দেয়ালে একছেন বিশ্ববরেণ্য মানুষদের বেশ কিছু প্রতিকৃতি।

ঢাকার তাজমহল

দৃষ্টিনন্দন তাজমহলটি নির্মাণ করতে তার লেগেছে প্রায় ৬ মাস আর ব্যবহার করছেন প্রায় ২ হাজার কলম। বেশকিছু টাকা খরচও হয়েছে তার। আগ্রার তাজমহলের আদলে রঙও করেছেন তার নিজের বানানো তাজমহলে। শাজাহানের বানানো তাজমহলে রাতের আধারে হাজারো মনিমুক্তা আলো আর আধিারির খেলা খেলে। সেই আলো আধারির খেলা খেলতে মূল ভবনসহ গোমজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন রংয়ের লাইট। ২২ বর্গস্ক্যায়ার ফিটের তাজমহলের উচ্চতা ২৫ ইঞ্চি।

তাজমহল নিয়ে আলাপচারিতায় ওয়াজেদ জানান, ‘কলম দিয়ে আমরা লেখার মতো গুরত্বপূর্ণ কাজ করি। কিন্তু কালি শেষ হয়ে গেলে সেটা এমনভাবে ছুড়ে ফেলে দেই যে এটা দিয়ে যে আরও অনেক কাজ করা যায় সেটা যেন ভুলেই যাই। আসলে ফেলে দেওয়া কলম দিয়ে কিভাবে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায় এমন ভাবনা থেকে তাজমহল তৈরির চিন্তা আমার মাথায় আসে।’

দুনিয়ার এত কিছু থাকতে কলম দিয়ে কেন তাজমহল বানানো হলো এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াজেদ বলেন, ‘তাজমহলের সৌন্দর্য আমাকে আকর্ষণ করে। আগমী ২৬ থেকে ২৮ জুন এস এম হলের হলরুমে এটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে, তবে তাজমহলটি ইত্যাদির মাধ্যমে দেশবাসিকে দেখাতে পারলে ভাল লাগতো।’



মন্তব্য চালু নেই