পিনাক-৬ উদ্ধার সমাপ্ত ঘোষণা, এ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার ৪৬

লঞ্চডুবির অষ্টম দিন শেষে উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থ হয়ে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর শনাক্তকরণ তৎপরতা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার সকাল ১১টায় মাওয়ায় পদ্মা রেস্টহাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল হাসান বাদল এ কথা জানান।

তিনি বলেন, বাস্তবতা বিবেচনা করে, সময় বিবেচনা করে, নদীর পরিস্থিতি ও আবহাওয়া- সব কিছু বিবেচনা করে আমরা মনে করছি, লঞ্চ সনাক্তকরণ তৎপরতা আর চালানোর কোনো অবকাশ নাই। চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বা চালালে ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। তাই এই লঞ্চ সনাক্তকরণ তৎপরতা আমরা স্থগিত ঘোষণা করছি। অনান্য কার্যক্রম- লাশ খোঁজা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে আসার পথে পদ্মায় ডুবে যায় এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও জেলা প্রশাসন ওই লঞ্চে আড়াই শতাধিক যাত্রী থাকার কথা বললেও স্থানীয় পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারপাওয়া যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পিনাকে যাত্রী ছিল সাড়ে তিনশর মতো।

দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা ও পুলিশ ঘাটের স্পিডবোটে করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সে সময় আনুমানিক ১১০ জনকে জীবিত করা সম্ভব হয়।

এরপর ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের লোকবল ও নৌযান নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রশাসনের ভাষায় ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে তল্লাশি চালানো হয় নদীর ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। কিন্তু পিনাকের অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারায় মাঝ পদ্মায় বেকার বসে থাকতে হয় উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীককে।

মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল হাসান বাদল জানান, লঞ্চডুবির পর আট দিন পেরিয়ে যাওয়ায় নিহতদের লাশ নষ্ট (ডিকম্পোজড) হয়ে গেছে। সনাক্ত না করতে পেরে ১৫টি লাশ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মাদারীপুরে দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পিনাক-৬ শনাক্তকরণের চেষ্টা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম থাকবে মাওয়াতেই।

তিনি বলেন, পিনাক শনাক্তকরণ শেষ হলেও ভাটি অঞ্চলে মরহেদ উদ্ধার কার্যক্রম চলবে। যদি কোনো মরদেহ ভেসে আসে তবে তার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এ জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বরিশাল, মাদারীপুর, ভোলা, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জের পুলিশ ও জেলা প্রশাসন নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয় কোনো মৃতদেহ উদ্ধার করলে তা মাদারীপুরে পাঠানো হবে।

বাদল জানান, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে ২৮ জনের মরদেহ। আর পরিচয় পাওয়া যায়নি ১৮ জনের।

এছাড়াও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৬১ জন বলেও জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই