কলারোয়ায় গ্রামীণ পাকা সড়কের বেহাল দশা

পিচঢালা সড়ক এখন রঙিন ধূলায় ভরপুর

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার গ্রামীণ পাকা সড়কগুলোর বর্তমানে ভীষণ বেহাল দশা। অধিকাংশ পাকা সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ সড়কই খানা- খন্দে ভরা। সড়কের পিচ উঠে রঙিন বর্ণ ধারণ করেছে। রঙিন ধূলা মেখে পথ চলতে হয় পথচারীদের। ইট-খোয়ার রঙিন বর্ণ দখল করেছে কালো পিচঢালা সড়কগুলো। তবে আশার কথা হলো সড়ক সংস্কার কাজ দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে। তবে পরিমাণে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। সময়মতো বেহাল দশার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর হাল না ফেরালে সকল পাকা সড়কগুলো আগামি বর্ষা মৌসুমে নষ্ট হয়ে যাবে-এমনটি আশঙ্কা ভূক্তভোগী মানুষজনের।

বিশেষ করে কলারোয়া-চান্দুড়িয়া, কলারোয়া-বালিয়াডাঙ্গা, কলারোয়া-রায়টা-খোরদো ও কলারোয়া-সরসকাটি সড়ক সংস্কার করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এলজিইডি আওতায় পাকা সড়ক রয়েছে ৭৩৮ কিলোমিটার। সূত্রমতে, ১০.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাগুড়ি-চন্দনপুর সড়কের ন’কাটি বিলসংলগ্ন ৩ কিলোমিটার, ১০.২ কিলোমিটার দীর্ঘ কলারোয়া-রায়টা-খোরদো সড়কের ৭০ ভাগ, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কলারোয়া-চন্দনপুর কলেজ সড়কের দমদম বাজারের পর থেকে চন্দনপুর পর্যন্ত, ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চন্দনপুর কলেজ মোড়-চান্দুড়িয়া সড়কের ৩ কিলোমিটার, ৯.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কলারোয়া-গাড়াখালি সড়কের ৬.৫ কিলোমিটার ও কাজীরহাট বাজার থেকে সিংগা পর্যন্ত এবং কলারোয়া-সরসকাটি সড়ক ও কলারোয়া-ধানদিয়া সড়ক সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

এছাড়া গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন গ্রামের অভ্যন্তরীণ পাকা সড়কগুলোর বেহাল দশা কাটাতে সেগুলোও সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে, কলারোয়া- চান্দুড়িয়া সড়কের ঝাঁপাঘাট বাঁশতলা মোড় থেকে গাবতলা মোড় হয়ে সোনাবাড়িয়া বারিকের মোড় পর্যন্ত রাস্তা খানা-খন্দে ভরে গেছে। রাস্তায় চলাচল ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ছোটো-খাটো দুর্ঘটনা নিত্য দিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে। এসব খানা-খন্দের রাস্তা বৃষ্টি হলে পানিতে ডুবে থাকে। ফলে পথ চলা দায় হয়ে পড়ে পথচারীদের। ভীষণ ব্যাহত হয় যান চলাচলও। এ সড়ক বেয়ে এগিয়ে গেলে শ্রীরামপুর-বিক্রমপুরের জোড়া কালভার্ট ব্রীজের পশ্চিম পার্শে¦র রাস্তায় অসংখ্য স্থানে বড় বড় ভাঙন ও গর্ত।

এভাবে ভাঙাচোরা রাস্তা চলে গেছে চন্দনপুর কলেজ মোড় অবধি। এরপর সেখান থেকে চান্দুড়িয়া যেতে ৩.৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ কিলোমিটার রাস্তাই ভাঙাচোরা ও খানা-খন্দে ভরা। অনুরূপ অবস্থা কলারোয়া-বালিয়াডাঙ্গা সড়কের সাড়ে ৬ কিলোমিটার জুড়ে। কলারোয়া কোল্ডস্টোরেজ মোড় থেকে মাহমুদপুর, লাঙ্গলঝাড়া, গোয়ালচাতর, হঠাৎগঞ্জ হয়ে বালিয়াডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত অসংখ্য ভাঙন ও গর্ত প্রত্যক্ষ করা গেছে। সবখানেই ইট-খোয়া উঠে গেছে। কালো সড়ক রূপ নিয়েছে রঙিনে। ধূলা ও খানা-খন্দ পেরিয়ে প্রতিদিন পথ চলতে হয় মানুষের।

ব্যস্ত এই সড়কে চলাচল করতে মানুষকে ভীষণ ঝুঁকির মোকাবেলা করতে হয। জনগুরুত্বপূর্ণ কলারোয়া-সরসকাটি সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। সরসকাটি থেকে কলারোয়া অভিমুখে আসতে গেলে দেখা যাবে গাজনা পর্যন্ত রাস্তা ভীষণ খারাপ। আবার বৈদ্যপুরের মোড় থেকে বামনখালি বাজার হয়ে কলারোয়ার মির্জাপুরের মোড় পর্যন্ত অনেক স্থানে রাস্তা ভাঙাচোরা। যা জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আবেদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ১০ টির মতো প্যাকেজে উপজেলার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়ক খন্ড খন্ড আকারের সংস্কার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। তবে যে পরিমাণ সড়ক সংস্কার করা প্রয়োজন তা করা যাচ্ছেনা, বরাদ্দ না থাকায়। তিনি জানান, কলারোয়া-চন্দনপুর সড়কের বারিকের মোড় থেকে সোনাবাড়িয়া অভিমুখি সড়ক দু’পার্শ্বে ৩ ফুট করে প্রশস্ত করে ৩০০ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। একই সড়কের সোনাবাড়িয়া ঈদগাহ থেকে বিক্রমপুর মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সংস্কার করা হচ্ছে।

এই দু’টো প্যাকেজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩.০৫ লাখ টাকা। এছাড়া আরও যেসব প্যাকেজে সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ চলছে-সেগুলো হলো: ৬৫.২২ লাখ টাকা ব্যয়ে কলারোয়া কোল্ড স্টোরেজ মোড় থেকে হরিণা মাঠ পর্যন্ত ৩.৮৮ কিলোমিটার, ২৯.৮৮ লাখ ব্যয়ে হুলহুলিয়া থেকে সিংগা বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, ৬২.২২ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজীরহাট থেকে খোরদো পর্যন্ত ২.৭৩ কিলোমিটার, ২৫.০৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদরা বিজিবি ক্যাম্প থেকে ভাদিয়ালি স্কুল পর্যন্ত ১.৩৩ কিলোমটিার, ৬৪.৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কোমরপুর থেকে সিংগা বাজার পর্যন্ত ১.৫২ কিলোমিটার, ৩৭.৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে জয়নগর থেকে কামারালী পর্যন্ত ২.৫১৩ কিলোমিটার এবং ৩৩.৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গোয়ালচাতর থেকে হরিণা ব্রীজ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার।

কলারোয়া-চান্দুড়িয়া সড়কের ঝাঁপাঘাট বাঁশতলা থেকে গাবতলা মোড় ও বিক্রমপুর-চন্দনপুর-চান্দুড়িয়া সড়কটি ভয়াবহ ভাঙন কবলিত হলেও পাকা সড়ক সংস্কার প্যাকেজে এখনো পর্যন্ত অন্তর্ভূক্ত হতে না পারায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নিত্যভূক্তভোগীরা।

সূত্র জানায়, কলারোয়া-সরসকাটি সড়কটি সড়ক ও জনপদ(সওজ) বিভাগের আওতাধীন। এই সড়কের সংস্কারের বিষয়টি তাই এলজিইডি’র আওতায় পড়ে না।



মন্তব্য চালু নেই