পিএস এতো জানলে আমার মূর্খ হইলেও চলে!

প্রধান অতিথি হয়ে একটি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিশিষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কিন্তু আলোচনার শুরুতেই তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) চারুকলার ইতিহাস বর্ণনা করে বেশ দীর্ঘ সময় কাটান। মঞ্চে প্রধান অতিথির আসনে বসে বারবার কুঞ্চিত কপালে আঙুল বুলাচ্ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানে আগতরাও বিরক্ত হচ্ছিলেন। দীর্ঘসময় পর বক্তব্যের ‘চান্স’ পেয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মাইক্রোফোনের সামনে এসেই বলেন, ‘পিএস এতো জানলে আমার মূর্খ হইলেও চলে’!

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ঢাকা আর্ট কলেজের আয়োজনে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান সাড়ে ৬টার দিকে। এর আগেই মঞ্চে চলছিল গান। প্রদর্শনীর আয়োজক ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। প্রধান অতিথি এসেও শোনেন কয়েকটি গান। এর পরই শুরু হয় তাকে ঘিরে তরুণ-তরুণীদের সেলফি তোলার পালা। গান চলছে, সেইসাথে চলছে সেলফি তোলাও। গান শেষ হলে মঞ্চে আসন অলঙ্কৃত করেন অতিথিরা। ঢাকা আর্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ড. গোবিন্দ রায়ের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে শুরু হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পিএসের বক্তব্য। সেই বক্তব্য যেন শেষই হচ্ছিল না!

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা ভাবছেন আমার পিএস যখন এতোক্ষণ বক্তৃতা দিল, এতো কিছু জানে, তাইলে প্রধান অতিথি কতো কিছুই না জানে। আসলে পিএস এতোকিছু জানলে প্রধান অতিথির মূর্খ হইলেও চলে। ইংরেজিতে ভালো হলে অংকে কাঁচা হয় আর রাজনীতিতে ভালো হলে শিল্পে কাঁচা হয়।’

শিল্পীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে বাঘ-সিংহ আঁইকা পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা বের করেন, সেইটাই এখন বাঙালির বড় আন্দোলন। চিত্রকলার বড় সাফল্য যে, এই যে আপনারা হাতি-ঘোড়া বানাইছেন, বর্তমান সরকার বাধ্য হইছে নতুন পে-স্কেলে নববর্ষের জন্য ২০ শতাংশ উৎসব ভাতা দিতে। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।’

“পটুয়া কামরুল হাসান স্বৈরাচারী আন্দোলনের সময় ‘বিশ্ববেহায়া’ নামের এক ছবি আঁইকা আন্দোলন জোরালো কইরা দিছিলেন। সেই ছবি কারেন্টের মতো কাজ করলো। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হইয়া গেলো। তাইলে আগাই আছে কারা?” তখন উপস্থিত শ্রোতারা হাত তুলে সমস্বরে বলেন ‘শিল্পীরা’।

দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘সারাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির জন্য শুধু মূর্খ রাজনীতিবিদদের দায়ী করলে চলবে না। শিল্পী-কবি-ভাবাবেগসম্পন্ন আপনাদের নিয়েও জোরালো আন্দোলন হবে। দেশ থেকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করা হবেই। কারণ, রাজনীতি ও কলা একে অপরের পরিপূরক।’

বাঙালির আন্দোলন যতোটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক মন্তব্য করে এই প্রবীণ পার্লামেন্টেরিয়ান বলেন, ‘বায়ান্ন থেকে শুরু করে একাত্তর এইটা তো কলার আন্দোলন। এইটা কি আইট্টাকলা না বিচিকলা? না কি সবরিকলা? এইটা হইল শিল্পকলা। যতোদিন শিল্পীরা আছে আর আমাদের মতো গবেট রাজনীতিবিদরা আছে, ততোদিন বাংলাদেশ মৌলবাদিদের হাতে যাবে না।’

বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে এক ও অভিন্নভাবে জড়িয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকা আর্ট কলেজের শিল্পীরা। এর পর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘বকুল ফুল’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’সহ বেশ কয়েকটি গান।

সাত দিনব্যাপী এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে ১২৪ শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষকের মোট ১২০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। আলোচনার পর প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ১৬ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।



মন্তব্য চালু নেই