পাল্টে যাচ্ছে হাতে লেখা সাক্ষ্যগ্রহণের শত বছরের ইতিহাস

পাল্টে যাচ্ছে বিচারকদের হাতে লেখা সাক্ষ্যগ্রহণের শত বছরের ইতিহাস। আগামী ২ মার্চ সিলেটের আদালতে ডিজিটাল কার্যক্রমের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সূচনা হচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন পদ্ধতি।

সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে মামলার সাক্ষ্য নেওয়ার হার যেমন দ্বিগুণ হবে তেমনি বাড়বে বিচার বিভাগের গতিশীলতা।

বিচারকাজে বিচারকরা নিজ হাতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য লেখেন। ফৌজদারি কার্যবিধি হিসেবে এই ইতিহাস প্রায় ১৫৬ বছরের পুরোনো। কিন্তু সাক্ষীর বক্তব্য ঠিকমত লেখা হচ্ছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ থাকতো সব পক্ষেরই।

দীর্ঘদিন পরে হলেও এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির সহায়তায় সিলেটের ৪০টির মধ্যে ২০টি আদালত কক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হচ্ছে।

ডিজিটাল এই পদ্ধতিতে সাক্ষীর বক্তব্য টাইপ করবেন কম্পিউটার অপারেটররা। বক্তব্য সঠিকভাবে লেখা হচ্ছে কিনা তা মনিটরের মাধ্যমে দেখতে পারবেন বিচারক, মামলার সাক্ষী, সাক্ষীর আইনজীবী, আসামী ও তার আইনজীবী।

শুধু তাই নয় সবার দেখার সুবিধা করে দিতে থাকছে বড় পর্দার ব্যবস্থা। টাইপিং এর পাশাপাশি পুরো সাক্ষ্যগ্রহণ রেকর্ডিং এর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেওয়া সাক্ষ্যগ্রহণের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে কথা বলেছেন আইনজীবীরা।

আইনজীবীদের মতে, উভয়পক্ষের আইনজীবী সাক্ষ্যগ্রহণের প্রক্রিয়াটি দেখতে পাচ্ছেন। এটি একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় সাক্ষীর সাক্ষ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন ও রেকর্ড করা হবে। তাই এটি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বলে তারা মনে করেন।

তবে বাকি সবাই, এমনকি বারান্দায় দাাঁড়ানো অন্যান্য সাক্ষীরাও সাক্ষ্যটি বড় পর্দায় দেখতে পাবে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা যেসব সমস্যা উল্লেখ করেছেন সে সম্পর্কে নিজের মতামত দেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমেদ পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, একজন সাক্ষী সাক্ষ্যপ্রদানের সময় ওই মামলায় উপস্থিত অন্যান্য সাক্ষীদের আদালত কক্ষে থাকার বা আগের সাক্ষী কী বলছে তা শোনার কোনো বিধান নেই। তাই আদালত কক্ষে থাকবে না বলে অন্যান্য সাক্ষী আগের সাক্ষীর সাক্ষ্য দেখতে পারবে না বলে আশ্বস্ত করেন এই বিচারক।

এছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যার কথা মাথায় রেখে এক ঘণ্টা ব্যাকআপ রাখার মতো যন্ত্রপাতি সেট করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সাক্ষ্যগ্রহণের পদ্ধতি পরিবর্তনে প্রধান বিচারপতির ভূমিকা ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে কি সুবিধা পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিচারক বলেন, ‘যতো সাক্ষীই আদালতে আসুক না কেনো, এই পদ্ধতিতে সবার সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুতগতিতে শেষ করা যাবে। বর্তমানে এ পদ্ধতিতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে সাক্ষ্য নেয়া যাচ্ছে।’

ইউএনডিপি জানিয়েছে ডিজিটাইজেশনে করতে আদালত প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।



মন্তব্য চালু নেই