পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ বলে দাবি করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। নিজের দাবির পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘গত ৫ বছরে পাহাড়িদের ওপর অন্তত ১০টি সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে কমপক্ষে ১৪টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।’

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত ‘রাঙ্গামাটির সহিংসতা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সুলতানা কামাল। আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যাকে ‘প্রধান’ উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘শান্তি চুক্তির ১৭ বছর পরেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সক্রিয় করা হয়নি। বর্তমানে কমিশনের কার্যক্রম কার্যত স্থবির।’

‘খাগড়াছড়িতে বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহনের ফলে সেখানে ২১টি আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় বিজিবি হামলা চালায়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উল্টো আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

‘বান্দরবনেও বিজিবি দপ্তর ও সেনানিবাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে নিরাপত্তার অজুহাতে দপ্তর স্থাপনের নামে ক্রমাগত ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। যেখানে আদিবাসীরা প্রায়ই আক্রমণের শিকার হন, সেখানে কাদের স্বার্থে এত নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এ চুক্তির বাস্তবায়নে কিছু করা হয়নি তা বলা যাবে না। তবে ১৭ বছরেও অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য এলাকায় এখনো শান্তি ফিরে আসেনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা অপরাধ এবং অধিকার হরণের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হচ্ছে না। কারণ, যারা এসব করছে তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য।’

‘পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এমন পরিস্থিতি থাকলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘আদিবাসীরা যখনই তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সোচ্চার হয় তখনই তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য স্বপন আদনান কমিশনের পক্ষ থেকে ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।

এরমধ্যে অন্যতম সুপারিশগুলো হলো- শান্তি চুক্তির মৌলিক অংশগুলোর বাস্তবায়নে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ, যেকোন উন্নয়নের নামে কাজ শুরুর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনমত যাচাই, শান্তি চুক্তির সঙ্গে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ধারা সংশোধন করে কমিশনকে কার্য্কর করা, উচ্ছেদকৃত পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন করা, বিভিন্ন জাতিগত সংঘাতের ঘটনাগুলোর দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকরী তদন্ত করে ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা এবং পাহাড়িদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কার।



মন্তব্য চালু নেই