পাপনের দাবি মাশরাফি টি-টুয়েন্টি ছাড়েননি!

‘আমিএকটা কথা বারবার বলছি, মাশরাফি কিন্তু ছাড়েনি। আমরা একবারও বলিনি মাশরাফি স্কোয়াডে (টি-টুয়েন্টি দলে) নেই। ও অধিনায়কত্ব ছেড়েছে।’

‘এ পর্যন্ত টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়া কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে খুব একটা খবর-টবর দেখিনি। বাংলাদেশেই দেখলাম, টি-টুয়েন্টি থেকে অধিনায়ক চলে যাচ্ছে বলে হুলস্থুল! অন্য দেশে টেস্ট ও ওয়ানডে থেকে কেউ বিদায় নিলে কথা হয়, কিন্তু টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় নিলে এতো কথা হয় না।’

উপরের মন্তব্যটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। প্রিয় পাঠক, আবারও বলছি উপরের মন্তব্য দুটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। উপরের দুটি মন্তব্যই মাশরাফির টি-টুয়েন্টি থেকে অকাল অবসর প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। শুক্রবার বিজয়ীর বেশে বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

গত মঙ্গলবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস করার সময় টি-টুয়েন্টি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি। তার আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভেরিফাইড পেজেও টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় সম্পর্কে লম্বা বিবৃতিও দিয়েছেন। কিন্তু পাপন বলছেন মাশরাফি টি-টুয়েন্টি ছাড়েননি!

মানলাম, মাশরাফি যা বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে, তা ভুল এসেছে। দেশবাসী যা শুনেছে, তা ঠিক শুনেনি। বিসিবি সভাপতির কথাই ঠিক। মাশরাফি টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নেননি। শুধু অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই কেন আবার বললেন, মাশরাফির টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়ে বাংলাদেশে যে হুলস্থূল হচ্ছে, তা অন্য দেশে হয় না! মাশরাফি যদি টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় না-ই নিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি উদহারণ হিসেবে টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় নেওয়া অন্য দেশের খেলোয়াড়দের প্রসঙ্গটি টেনে আনলেন কেন?

বিসিবি সভাপতির উপরে উল্লেখিত মন্তব্য দুটি কী একটির সঙ্গে আরেকটি সাংঘর্ষিক নয়? এতে কি বিভ্রান্তিই ছড়াচ্ছে না! উল্টো বিসিবি সভাপতিই মাশরাফির টি-টুয়েন্টির বিদায় নিয়ে দেশবাসীর উন্মাদনাকে ‘হুলস্থূল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন কোন দেশে কোনো খেলোয়াড়ের টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়ে এমন সোরগোল হয়! এবারের শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি-তিনটি সিরিজেই ১-১ ড্র করেছে বাংলাদেশ। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক বড় এক অর্জন। ঐতিহাসিক এই সফর শেষে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে, এটা অনুমিতই ছিল। ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে মাশরাফি-মুশফিক, বাংলাদেশের দুই অধিনায়ককেই। তবে মাশরাফির দিকেই নজরটা যেন ছিল একটু বেশি। পেছনের প্রেক্ষাপটের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠে, এর মাধ্যমে মাশরাফিকে বিদায়ী সংবর্ধনাই জানানো হলো কিনা। এমন প্রশ্ন উঠতেই পাপনের উপরোক্ত মন্তব্য দুটি করেন।

পরে অবশ্য বিসিবি সভাপতি তার মন্তব্যের ব্যাপারে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। যে ব্যাখ্যায় আমরা আশাবাদী হতেই পারি, মাশরাফি কলম্বোতে যাই বলুন, কিন্তু বিসিবি তাকে এখনো টি-টুয়েন্টি দলে রাখার কথাই ভাবছে। পাপন বলেছেন, ‘আমি প্রথম থেকেই বলছি-তিন সংস্করণের ক্রিকেটে আমাদের তিনজন ভিন্ন অধিনায়ক হবে। সেই অধিনায়কত্বটাই ভাগ হয়েছে শুধু। ও যদি নিজেকে ফিট মনে করে, তাহলে ও অবশ্যই টি-টুয়েন্টি দলে থাকবে। দরকার হলে আমরা কি ওকে ছেড়ে দিব? মুশফিক তিন সংস্করণেই অধিনায়ক ছিল। কিন্তু দুটি সংস্করণ থেকে ওর অধিনায়কত্ব চলে গেছে, তাতে কী মুশফিক বিদায় নিয়েছে?’

মজার ব্যাপার হলো, মাশরাফি কিন্তু বিমানবন্দরেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। টি-টুয়েন্টির কথা ভুলে তিনি এখন পুরো মনোযোগ দেবেন ওয়ানডে ক্রিকেটের দিকে।



মন্তব্য চালু নেই