পানির ওপর হাঁটার রহস্য

পাশ্চাত্য যদি হয় ডাকিনী বিদ্যার আখড়া, তাহলে প্রাচ্য হলো তান্ত্রিকদের তীর্থক্ষেত্র। তবে পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্য এই দুই স্থানেই একদল বাজিকর মানুষ বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে তাক লাগিয়ে দেন। মানুষ জানে যে তারা বুজরুকি দেখাচ্ছে তবুও বিনোদনের জন্য মানুষ নাটুকে অতিপ্রাকৃত ঘটনার মুখোমুখি হয় সুযোগ পেলেই। কিন্তু বাস্তবই যদি কেউ পানির উপর দিয়ে হেটে যায়, তাহলে কেমন হয়? হয়তো পাঠক বলতে পারেন, এটা সম্ভব নয় কিংবা এটাও আরেক ধরনের বুজরুকি। কিন্তু পাঠক, প্রকৃতির কত রহস্যই এখনও আমাদের অজানা। তেমনি স্লোভাকিয়ার হাই তাতরা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত লেকের পানির উপরে যে হাঁটা যায় তাও অনেকেরই অজানা। কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে পানির উপর দিয়ে হাটা সম্ভব, যেখানে পানির উপর ছোটো এক টুকরো ইট খণ্ড থাকলেও তা ডুবে যায়। হ্যা, এখানেই যত রহস্য।

চলতি মাসের ৮ তারিখ টমাস নুনুক নামের এক ভদ্রলোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার একটি ভিডিওচিত্র আপলোড করেন। আর আপলোড করার পর অল্প সময়ের মধ্যেই এই ভিডিওচিত্রটি প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন মানুষ দেখে নেয় এবং অবিরত প্রশ্ন করতে থাকে যে এটা কিভাবে সম্ভব। রহস্য কিছুই নয়, প্রাকৃতিক কারণেই হাই তাতরা পাহাড়ের পাদদেশের লেকের পানি খুব দ্রুত স্বচ্ছ বরফে পরিণত হয়। আর তাই যেকেউ চাইলেই একটু সাবধানতা অবলম্বন করে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারেন পুরো লেক জুড়ে।

ইউটিউব ব্যবহারকারী টেইলর ওলফ তার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘পৃথিবী কত সুন্দর হতে পারে তার জলজ্যান্ত নিদর্শন হলো এটা।’

তবে ইউটিউবে এই ভিডিওচিত্র দেখে যে শুধু সাধারণ মানুষই আগ্রহী হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী যাদের মধ্যে ভূতত্ত্ববিদও আছেন তারা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই লেকটি নিয়ে। ভূতত্ত্ববিদ মেগান মুসোলিন জানান, ‘স্বচ্ছ বরফ সাদা বরফের তুলনায় দ্বিগুন শক্তিশালী। স্লোভাকিয়ার ওই লেকের পানির উপরে আস্তরন পরা স্বচ্ছ বরফ মানুষের হেঁটে চলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে এটা সম্ভব নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি। কারণ এই সময়ে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে এবং বাতাসের সংস্পর্শে খুব দ্রুত পানি বরফে পরিণত হয়।’

লেকটিকে ঘিরে বিজ্ঞানীদের যেমন আগ্রহ আছে, তেমনি আগ্রহ আছে খিষ্ট্র ধর্মাবলম্বীদের। কারণ ১৯৯৭ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় এক তীর্থ যাত্রায় বের হন এবং এই লেকের উপর দিয়ে দলবল সমেত হেঁটে যান। তখন এই বিষয়টিকে যিশুর মহিমা হিসেবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যিশুর মহিমার চেয়েও প্রকৃতির মহিমাকেই ব্যবহার করেছিলেন পোপ জন পল। হাই তাতরা লেকটি স্লোভাকিয়া এবং পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য দুটি জায়গা হলো হাই তাতরা ও লো তাতরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এই দুটি স্থানই ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত, যে কারণে ভূ-পৃষ্ঠের স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় ওখানকার তাপমাত্রা অনেক কম।



মন্তব্য চালু নেই