পাটখড়িতে সোনালী স্বপ্ন

মোঃ শামীম আখতার, উপজেলা প্রতিনিধি, মিঠাপুকুর (রংপুর)॥ আবু তাহের আলী মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের মাদারপুর গ্রামের কৃষক। তিনি পৌনে এক একর জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। প্রতিমন পাট ১৭শ ৫০ টাকা দরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে তাঁর লাভ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। শুধু সোনালী আঁশ পাটেই নয়- তিনি আরও ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন পাট খড়ি বিক্রি করে।

উপজেলার রানীপুকুর বাজারে সপ্তাহে ৩ দিন হাটবার। এই হাটে প্রতিদিন ১০ লাখেরও বেশি টাকার পাটখড়ি বিক্রি হয়। স্থানীয় পাট চাষীরা ছাড়াও আশপাশের কয়েক ইউনিয়নের চাষীরা সেখানে পাটখড়ি বিক্রি করছেন। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনা-বেচা।

‘গ্রামে ঘুরে ঘুরে পাটখড়ি কিনে নিয়ে আসি। সেগুলো আবার বিক্রি করি বাজারে। বর্তমানে রবিশস্য চাষাবাদ করার জন্য পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা। প্রতিদিন প্রায় ৩/৪’শ টাকার মত আয় হয়।’ বলছিলেন খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী তেকানী গ্রামের পাটখড়ির পাইকার ফজলুল হক। তিনি ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন পাটখড়ি ব্যবসায়। পাটখড়ি কিনতে আসা মাদারপুর গ্রামের কৃষক মুকুল মিয়া বলেন, ১২ শতক জমিতে পটল আবাদ করেছি। পটলের মাচা দেওয়ার জন্য পাটখড়ি দরকার, তাই কিনতে এসেছি। গতবারের চেয়ে এবার পাটখড়ির দাম একটু বেশি। জুম্মা জলছত্তর গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, ৫০ শতক জমিতে পাটখড়ি দিয়ে মাচা দিতে গিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

সরেজমিনে রানীপুকুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাটখড়ির কেনা-বেচার মহোৎসব। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজার। রানীপুকুর মহাবিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে বাজারটি। সপ্তাহে শনি, সোম ও বৃহস্পতিবার বসছে পাটখড়ির বাজার। ছোট ছোট আঁটি বেঁধে পাইকাড়রা বিক্রি করছেন পাটখড়ি। হাট ইজারাদার আঁটি প্রতি ক্রেতা ও বিক্রেতার উভয়রই কাছে নিচ্ছেন ২ টাকা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পাইকার জানান, সরকারী নিয়মে হয় ক্রেতা, নয়তো বিক্রেতার কাছে টোল নিতে হবে। কিন্তু, রানীপুকুর হাট ইজারাদার উভয়রই কাছে টাকা নিচ্ছে। রানীপুকুর এলাকা বাসিন্দা শিক্ষক ফুয়াদ হাসান বলেন, পাটখড়ি রানীপুকুর এলাকার ঐতিহ্য।

প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার পাটখড়ি বিক্রি হয় রানীপুকুর বাজারে। গত মৌসুমে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা বেশি বেশি করে পাটচাষ করছেন। উপজেলা পাট কর্তকর্তা মহাব্বত আলী বলেন, পাটচাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকার নানা কর্মসুচী গ্রহন করেছে। পাটবীজ থেকে শুরু করে চাষীদের দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, পাটের পুরনো ঐতিহ্য আবার ফিরতে শুরু করেছে। পাট পচাঁনোর জন্য আধুনিক পদ্ধতি মিঠাপুকুরের কৃষকেরা গ্রহন করেছে। এরফলে, পাট ও পাটখড়ি গুনগত মান উন্নয়ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, সোনালী আঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরতে শুরু করেছে। আশাকরি এই ধারা অব্যহত থাকলে দেশ আরো উন্নয়নের দিকে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে যাবে।



মন্তব্য চালু নেই