পাকিস্তানের চিহ্নিত ২০০ যুদ্ধপরাধীর নাম প্রকাশ

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ২০০ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের আহ্বায়ক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থে স্বাধীনতা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

শাহজাহান খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধপরাধী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিচারের দাবি ও তাদের প্রতীকী বিচারের যে কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে তা পর্যায়ক্রমে সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে আজ আমরা সেই ’৭১-এর হানাদার নরপশু পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনা কর্মকর্তাদের তালিকা আপনাদের মাধ্যমে জনগণের সামনে প্রকাশ করছি। আমরা ইতোমধ্যে অপরাধীদের তালিকা সংগ্রহ ও তৈরি করতে গিয়ে পূর্বঘোষিত ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার সাথে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর আরও ৫ জন কর্মকর্তার সন্ধান পেয়েছি। এর ফলে ১৯৭১ সালে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তান সেনা সদস্যদের সংখ্যা হলো ২০০ জন।’

নৌমন্ত্রী বলেন, ‘এই তালিকার মধ্যে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের ঘটনাগুলির নীল নকশা প্রণয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত ৬৮ জন, জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক সকল যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে সরাসরি গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয় ১১৮ জন, ব্যাপক গণহত্যায় অংশ নেয় ১৪ জন। এই ১৪ জনের মধ্যে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ৩ জন এবং বিমানবাহিনীর ৩ জন কর্মকর্তা রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার চিহ্নিত এই যুদ্ধাপরাধী সেনা কর্মকর্তার নাম পদবি ও ব্যক্তিগত পরিচিতি নন্বরসহ তালিকাটি প্রকাশ করা হলো।’

মন্ত্রী আরো বলেন, “আমাদের আন্দোলনের ও দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ উল্লেখিত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনাদের বিচারের প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই, সেই সাথে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গঠিত তথ্য সংগ্রহ কমিটিকে আমাদের পক্ষ থেকে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”

শাহজাহান খান বলেন, ‘আমাদের ঘোষিত দাবির প্রেক্ষিতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। জামায়াতে ইসলামকে সংগঠন হিসেবে বিচার করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা ও তাদের সপরিবারে নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ অ্যাক্ট ১৯৭৩ সংশোধনের সিদ্ধান্ত।’

মন্ত্রী আরো বলেন, “আমাদের আরেকটি সুনির্দিষ্ট দাবি- মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, নির্যাতন ও গণআন্দোলনের অবমাননা বা অস্বীকার করে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও শহীদদের অপমান করে বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ‘জেনোসাইড ডিনায়াল ল’-এর আদলে আইন প্রণয়ন করা। এই আইন প্রণয়নের ঘোষণা ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী দিয়েছেন। আমরা এই পদক্ষেপকে আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় বলে মনে করছি।”

শাহজাহান খান বলেন, ‘আমাদের দাবিসমূহ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে উত্থাপনের জন্য স্পিকারের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল বুধবার বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কয়েক হাজার মানুষের এক বিশাল মিছিল সহকারে সংসদ অভিমুখে যাত্রা করব।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ‍যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মিয়া, সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী ও কামাল পাশা চৌধুরী, সহ-সদস্য সচিব কামরুল আলম সবুজ, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়া, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, মুক্তিযোদ্ধ এম ফরিদুজ্জামান খান, মোখলেসুর রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই