পাকিস্তানের কেন এমন মরণ?

১৯৯২ সালের কথা মনে আছে? সেবার পাকিস্তান এমন একটা টিম নিয়ে এসেছিল, যাদের শরীরী ভাষা বলে দিত-এরা কিছু একটা করতেই এসেছে। বিশেষ করে দলটার বোলিং আক্রমণ ছিল দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। আকিব জাভেদ, আকরাম ছাড়াও দলটিতে ইজাজ আহমেদ, আমির সোহেলের মতো বেশ কয়েকজন পার্টটাইম বোলার ছিলেন। যারা বিশ্বকাপ জিততে দারুণ অবদান রেখেছিলেন।

কিন্তু এবারের দলটার অবস্থা এতটাই নাজেহাল যে, প্রথম রাউন্ড থেকে তাদের বাদ পড়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যাপারটা এমন নয় যে হঠাৎ দলের খেলোয়াড়রা খারাপ খেলতে শুরু করেছেন। এই দল নিয়ে দেশটির সাবেক কয়েকজন খেলোয়াড় বেশ আগে থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেউ কেউ সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পাকিস্তানি নির্বাচকরা তাদের নির্বাচিত দলেই ভরসা রেখেছেন। ফলও যথারীতি পাচ্ছেন তারা।

প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে তাদের হারটাকে অনেকে নিছক চাপের ফল হিসেবে দেখছিলেন। পাক সমর্থকরা ভেবেছিলেন, পরের ম্যাচ থেকে ফিরে আসবে সেই পাকিস্তান। কিন্তু কিসের কী! ক্যারিবিয়ানদের কাছে মিসবাহরা বরং উড়ে গেলেন দ্বিগুণ হতাশা ‘উপহার’ দিয়ে।

এর পেছনে ৯৯ ভাগ দায় নির্বাচকদের। সেই সঙ্গে খেলোয়াড় এবং কোচের। আরেকটি কারণ হতে পারে তারা এবার আজমলের মতো বোলারকে পায়নি। তবে আজমল না থাকলেও ‘বার বার এমন মরণ’ তাদের হওয়ার কথা নয়।

নির্বাচকরা আজহার আলি, জুলফিকার বাবর এবং শোয়েব মালিকের মতো খেলেয়াড়কে দলে রাখেননি। এখানে তাদের যুক্তি শোয়েবসহ অন্যরা দীর্ঘদিন দলের বাইরে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, শোয়েব কিন্তু পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে তার খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্যরাও লিগে যথেষ্ট রান পেয়েছেন।

এছাড়া নির্বাচকদের দলে বিশেষজ্ঞ ওপেনার দুজন- হাফিজ ও আহমেদ শেহজাদ। এদের কেউ ব্যর্থ হলে উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদকে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দেখনু, খেলা শুরু হতেই পরিকল্পনার কথা তারা বেমালুম ভুলে গেলেন। বরং হুট করে বিখ্যাত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইউনুস খানকে ওপেনে নিয়ে আসলেন! তাতে কী হল, ভারতের বিপক্ষে সব সময় ভালো ব্যাট করা ইউনুস তার সেই ‘বিখ্যাত খেলা’টা খেলতে পারলেন না।

ওপেনিং পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন আরো আছে। যে সরফরাজ আহমেদকে তারা উপরের দিকে নামাতে চেয়েছেন তিনি কিন্তু বিশ্বকাপের আগের দিনগুলোতে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করে ভালো করেছেন। সরফরাজকে না খেলিয়ে নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন আরেক উইকেট রক্ষক উমর আকমলের ওপর। এই উমর আকমলকে উইকেটের পেছনে না রাখার কথা বলতে বলতে পাকিস্তানের কোনো সাবেক ক্রিকেটার ক্লান্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু কোচ এবং নির্বাচকরা তাদের কথা শুনলে না। নামিয়ে দিলেন উমরকে। তাতে কী হল, ভারতের বিপক্ষে কোহলিকে জীবন দিলেন উমর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্মীথকেও দিয়েছেন।

এবার ফাস্ট বোলিং বিভাগে আসা যাক। খুব গভীরতা এখানে দেখা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেট বিবেচনা করে মোহাম্মদ ইরফানকে আনা ঠিক আছে। তবে অন্যদের অবস্থা সুবিধার না। হাঁটুর চোটের পর ফিরেছেন জুনাইদ খান। আর সোহেল খান, এহসান আদিল ও রিয়াজ এখনো নিজেদের ম্যাচ-উইনার হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তাদের রাখা মানে ‘নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা’ ছাড়া আর কিছু নয়।

এছাড়া টেস্টের পারফরম্যান্স দেখে নির্বাচকরা দলে নিয়েছেন ইয়াসির শাহকে। তরুণ এই লেগ স্পিনারের কাছ থেকে চাওয়াটা বড্ড বেশি হয় গেছে। আফ্রিদির মতো লেগ স্পিনার থাকায় নির্বাচকরা বোলিং-বৈচিত্র্যের জন্য সহজেই দুই বাঁহাতি স্পিনার রাজা হাসান ও জুলফিকার বাবরের মধ্যে একজনকে নিতে পারতেন।

এবার ৯২’র দলের প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া যাক। তার আগে ‘বোকার স্বর্গে বাস’ করার একটি উদাহরণ শুনুন-পাকিস্তানের কয়েকজন নির্বাচক দল নির্বাচন করার পর ঢোল পিটিয়েছিলেন। এবারের এই দলটা নাকি ৯২’র সেই বিশ্বকাপ জয়ী দলের মতো!

না, থাক আর ৯২’র দলের গল্প শুনে কাজ নেই। ‘বোকার স্বর্গে বাসে’র অর্থ বুঝেছেন তো?



মন্তব্য চালু নেই