পাঁচ লক্ষণে বুঝবেন আপনি কর্মজীবন সম্পর্কে বাজে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন

আমরা প্রতিদিন যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তার অধিকাংশই সরল এবং সোজা-সাপ্টা। কর্মস্থলে কী পরে যেতে হবে, দুপুরের খাবারের জন্য কী খেতে হবে, যৌক্তিক সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে নাকি নেটফ্লিক্স দেখে সময় কাটাতে হবে।
অন্যদিকে, ক্যারিয়ারের মোড় পরিবর্তনকারী পয়েন্ট আপনাকে আরো গুরুতরভাবে নিশ্চল বসিয়ে রাখবে। বিশেষ করে আপনি যখন একটি বড় ও জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখোমুখি দাঁড়াবেন।
আপনার কি প্রমোশন নেওয়া উচিৎ? ভিন্ন শহরে চলে যাওয়া উচিৎ? কোনো ব্যবসা শুরু করা উচিৎ?
সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটু কঠিন। বিশেষ করে যখন কোনো একটি সঠিক উত্তর না থাকে। আপনার সেরা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পরেরবার কী করতে হবে তা পরিষ্কার নয়। আপনি কী করে জানবেন আপনি সঠিক পথেই এগুচ্ছেন নাকি এমন কোনো বাজে ক্যারিয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যার জন্য আপনি পরে অনুশোচনা করবেন?
পাঁচ লক্ষণে বুঝবেন আপনি কর্মজীবনে ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

১. আপনি বিপদের পূর্বাভাসের অনুভূতি লাভ করেছেন
নতুন কোনো চাকরির সুযোগ সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে কি আপনার কি বিপদের পূর্বাভাসজনিত অনুভূতি হচ্ছে?
আপনি হয়তো নতুন কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাদের প্র্র্রতি তেমন কোনো সংযোগ অনুভব করেননি। অথবা আপনি হয়তো স্থান পরিবর্তনের খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং কম বেতনে কাজ করতে আগ্রহী নন।
আমাদের বেশিরভাগই কোনো কিছু ঠিক মনে না হলে স্বজ্ঞামূলক অনুভূতি দিয়ে তা বুঝি। তবে এই অনুভূতিগুলো দূর এবং অগ্রাহ্য করার জন্য আমাদের সামনে প্রচুর পরিমাণ যৌক্তিক উপায় রয়েছে।
আপনি নিশ্চয় ভালো কোনো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে চান না বা সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না শুধু নার্ভাস হওয়ার কারণে।
কর্মজীবনে বড় কোনো মোড় পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আপনি হয়তো একটু সমস্যায় পড়তে পারেন। কিন্তু ক্রমাগত অস্বস্তিকর অনুভূতিতে আক্রান্ত হওয়ার অর্থ হলো আপনি এর জন্য প্রস্তুত নন বা এই পদক্ষেপ আপনার জন্য সেরা অপশন নয়। ১০/১০/১০ এই টেস্টটি গ্রহণ করুন এবং আপনার চিন্তার গতি ধীর করে নিয়ে আসুন: এখন থেকে ১০ সপ্তাহ পরে গিয়ে কি এই উদ্বেগ থাকবে? বা ১০ মাস পরে? বা ১০ বছর?
আপনার যদি সহকর্মীদেরকে পছন্দ না হয়ে থাকে তাহলে তা ১০ মাস বা এমনকি ১০ বছর পরে গিয়েও সমস্যার কারণ হতে পারে। আর নতুন কোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে ১০ সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

২. আপনার হতাশার অনুভূতি হচ্ছে
আপনি যদি নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে গভীরভাবে অসুখি হন বা আপনি এবং আপনার পরিবার কঠোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়ে যান তাহলে আপনি হতাশায় আক্রান্ত হতে পারেন। তখন আপনি হয়তো উদ্বেগে আক্রান্ত হতে পারেন বা সিদ্ধান্তটি শুধু দ্রুত শেষ করতে চাইতে পারেন।
আপনি যখন আতঙ্কিত অনুভব করবেন তখন পরিপ্রেক্ষিত ধরে রাখা কঠিন। সুতরাং এমন কারো সঙ্গে পরামর্শ করুন যিনি এই পরিস্থিতিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। ইনি হতে পারেন কোনো বিশ্বস্ত বন্ধু, পৃষ্ঠপোষক বা প্রশিক্ষক যিনি আপনাকে নৈর্ব্যক্তিক উপায়ে অপশনগুলো বাছাই করতে সহায়তা করতে পারবেন। আপনি হয়তো এটা দেখে বিস্মিত হবেন যে, নিজের মাথা থেকে বের হওয়ার পর শান্ত হওয়া কতটা সহজ এবং যৌক্তিকভাবে চিন্তা করা সম্ভব।

৩. আপনার অনুপ্রেরণা স্বাস্থ্যকর নয়
নিজের সঙ্গে সৎ থাকুন। আপনি কি অন্য কারো প্রতি বিদ্বেষবশত এই সুযোগটি গ্রহণ করছেন। হয়তো আপনার পুরোনো সহকর্মীদেরকে ঈর্ষান্বিত করার জন্য?
পরিবার ও বন্ধু মহলের সমালোচনা এড়ানো বা সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে গোপন করার জন্য নতুন কোনো চাকরি গ্রহণও বাজে লক্ষণ। কারণ আপনি পলায়ন-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন যে কারণে আপনি ভবিষ্যতে অনুশোচনায় ভূগতে পারেন।
আপনি যদি আপনার মা থেকে শুরু করে বাসের কোনো অপরিচিত লোকের কাছে নির্বিচারে পরামর্শ চান তার মানে হলো আপনি ভয়তাড়িত হয়েছেন। এ ধরনের মতামত যাচাই আচরণ করা হয় মূলত একটু ভালো অনুভূতি অর্জনের জন্য। আপনি বহিরাগত সম্মতির সন্ধান করছেন যে আপনি ঠিক কাজটি করছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে আপনি মূলত আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার অন্য লোকেদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন। যখন আপনি নিজের ওপর নির্ভর না করে বরং সকলের কাছে পরামর্শ চাইছেন। নিজের ওপর আস্থাবান হতে শেখাট গুরুত্বপূর্ণ।

৪. বিষয়টি নিয়ে আপনাকে নিজের সঙ্গে কথা বলতে হবে
নিজের সঙ্গে কথপোকথনে এই শব্দগুচ্ছের কয়েকটি সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, “যাক, আমারতো অন্তত…”
১. “যাক, আমারতো অন্তত একটি চাকরি আছে…”
২. “যাক আমি অন্তত আরো অর্থ উপার্জন করতে পারব…”
৩. “যাক অন্তত কৌশলগতভাবে এটি একটি প্রমোশন হবে…”
৪. “যাক, আমি অন্তত এই সুযোগ অতিবাহিত করে বোকা বনে যাব না…”
এই ধরনের উদ্বেগপূর্ণ আভ্যন্তরীণ কথপোকথন, যাকে বলা হয় বুদ্ধিবৃত্তায়ন, উদ্বেগের প্রতি একটি সধারণ প্রতিক্রিয়া। কারণ শক্ত আবেগ অসুখকর হতে পারে, আর আমরা প্রকৃত ঘটনা ও যুক্তির ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ দিই।
তবে যৌক্তিক হওয়া এবং যুক্তি ব্যবহার করাও অবশ্যই একটি বড় জিনিস। এটি অস্বীকৃতির সঙ্কেতও হতে পারে। গভীরে আপনি জানেন আপনার সম্ভাব্য ক্যারিয়ার পছন্দ হয়তো একটি বাজে ধারণা হতে পারে। ক্যারিয়ার পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এটি মনের কোনো উৎপাদনশীল কাঠামো হতে পারে না। কারণ আপনি এমন কিছু নিয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলছেন যা আপনি সত্যিই নিজের জন্য সঠিক বলে বিশ্বাস করেন না।

৫. আপনি বিরামহীন
গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্যারিয়ার সিদ্ধান্তের জটিল এই প্রকৃতি আপনাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে বা রাতের বেলা আপনাকে নিদ্রাহীন করতে পারে। যে কোনো ক্যারিয়ার মোড় পরিবর্তন আপনাকে ফাঁসে আটকাতে পারে। তবে আপনাকে প্রতিজ্ঞাগুলো দেখতে সক্ষম হতে হবে এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিখতে হবে। প্রমোশন গ্রহণ বা নতুন কম্পানি শুরু করা হোক আপনি হয়তো আপনার আরাম গণ্ডির বাইরে বের হয়ে গেছেন বলে অনুভব করতে পারেন। কিন্তু আপনি এই প্রক্রিয়ায় যা শিখবেন সে সম্পর্কেও আপনি উত্তেজনা বোধ করবেন।
বড় বড় সিদ্ধান্তের সঙ্গে আসে অনিশ্চয়তাও। মাথা ও হৃদয়ের ভারসাম্য স্থাপন করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। নিজের ওপর থেকে ভুয়া চাপ সরিয়ে ফেলুন এখনই যাতে সব সঠিক উত্তরগুলো খুঁজে বের করতে পারেন। আপনার পছন্দ যাই হোক না কেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যান। আর জেনে রাখবেন আপনার ক্যারিয়ার প্রতিনিয়তিই বিবর্তিত হচ্ছে।

সূত্র: ফোবর্স



মন্তব্য চালু নেই