পহেলা বৈশাখে নারীকে বিবস্ত্র করে টিএসসিকে কলঙ্কিত করল ওরা

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসএসসিতে কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সাধারণ মানুষেরা।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টিএসসি এলাকায় যৌন হয়রানির শিকার হন কয়েকজন নারী। টিএসসির মোড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় ৩০-৩৫ জন যুবক নারীদের শ্লীলতাহানি করে। এসময় তাদের বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নারীদের ওপর এই হামলা ঠেকাতে গিয়ে ওই যুবকদের হামলায় হাত ভেঙে যায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্লোগান কন্যা লাকি আক্তার এক ফেসবুক স্ট্যটাসে বলেন, “নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী গেটে যে বর্বর ঘটনা ঘটছে, তা পেছনের ঘটে যাওয়া অনেক বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে৷ কিছু সংগঠিত পশু ,বখাটে সোহরাওয়ার্দীর গেটে অনেক নারী, শিশু ও কিশোরীদের উপর সংগঠিতভাবে শকুনের মতো ঝাপিয়ে পড়ে, শত শত লোকের সামনে পাশবিক কায়দায় যৌন নির্যাতন করে৷ অনেক নারীকে বিবস্ত্র করে ফেলা হয়৷ এসময় নারীদের চিৎকার যাতে শোনা না যায় সেজন্য ৪০-৫০ জন কুকুরের বাচ্চাগুলো উচ্চস্বরে ভুভুজেলা বাজিয়ে এই মেয়েগুলোকে বিবস্ত্র করে। তারপর তারা এসব ভিডিও করে।”

তিনি বলেন, “ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা তাদের উদ্ধার করতে যায়৷ পশুগুলো হামলা চালিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি লিটন নন্দীর হাত ভেঙে ফেলে, অমিতের হাতের আঙ্গুল ভেঙে ফেলে৷ এছাড়াও আরো অনেক নেতাকর্মী আহত হন।”

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি লিখেন, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা পশু, জানোয়ারগুলিকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে৷ পুলিশের কাছে বারবার যাওয়া হলেও তারা কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে, নাকের ডগা দিয়ে পার পেয়ে যায় হত্যাকারীরা৷ হম্বিতম্বি করে এফবিআই আসার নাম করে, তদন্তে কিছুই পাওয়া যায় না৷ হাজার হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়ে এই সব পুলিশ পোষার দরকার কি? যৌন সন্ত্রাস চালানো হলে, অপরাধীদের ধরিয়ে দেয়া হলেও পুলিশ ছেড়ে দেয়৷

এই ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে আজ ছাত্র ইউনিয়ন মামলা করবে বলে জানান লাকি আক্তার৷

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও সাধারণ জনতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র রাজিব আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখন আর নিরাপদ নয়। একই জায়গায় অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবুও বর্ষবরণের এ দিনে এই জায়গাতে নিরাপত্তার তেমন ব্যবস্থা ছিল না। বর্ষবরণ সবার প্রাণের উৎসব। এমন উৎসবে বখাটেদের উৎপাত কখনও কাম্য নয়। তাদের সবার বিচার হওয়া উচিত বলে জানান তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ ঘটনার সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতারাসহ অনেকেই জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্রজোট নারীদের ওপর হামলার নিন্দা এবং এতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এ ঘটনায় শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, অপরাধীদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মডেল কন্যা বাঁধনকে বিবস্ত্র করে কতিপয় বখাটে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে। এরপর থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইটে টিএসসি এলাকায় জনসমাগম বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।



মন্তব্য চালু নেই