পর্বতে স্বামীর মৃত্যুর এক মাস পর পর্বতারোহী স্ত্রী জীবিত উদ্ধার
নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহণে গিয়েছিলেন চেক প্রজাহন্ত্রের এক দম্পতি। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এক নারীকে। বুধবার উদ্ধার হওয়া ওই নারী জানান, প্রায় এক মাস আগে পর্বতারোহণের সময় তার সঙ্গী মারা গেছেন। তারপর থেকে একাই বেঁচে ছিলেন তিনি।
বুধবার নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপের ফিওরডল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কের বিখ্যাত রুটবার্ন ট্র্যাক থেকে উদ্ধার করা হয় পাভলিনা পিজোভা নামের ওই নারীকে।
পুলিশ জানায়, এই যুগল ২৬ জুলাই পর্বতারোহণ আরম্ভ করেন। দুইজনের এই দলের পুরুষ সদস্য ২৮ জুলাই একটি খাড়া ঢাল থেকে পিছলে নিচে পড়ে যান। পাভলিনা জানান, তিনি ওই ঢাল বেয়ে নিচে নামার কিছুক্ষণ পরই তার স্বামীর মৃত্যু হয়।
তারপর থেকে তিনি লেক ম্যাকাঞ্জির কাছে একটি পরিত্যাক্ত কুড়েঘরে আশ্রয় নেন। কুঁড়েঘরটি ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই ট্র্যাক থেকে আধ মাইল দূরে অবস্থিত।
গত মাসে ভারী তুষারপাত সত্ত্বেও পাভলিনাকে সুস্থ অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। জুলাই মাসের শেষ থেকে এই দম্পতির কোন খোঁজখবর না থাকার বিষয়টি নজরে আসার পরই তাদের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু হয়।
ওটাগো লেকস সেন্ট্রাল এরিয়ার পুলিশ কমান্ডার ইন্সপেক্টর ওলাফ জেন্সেন বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত দুর্লভ ঘটনা। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এতদিন ধরে কোন মানুষের নিখোঁজ থাকার রেকর্ড নেই।’
পুলিশ আরও জানায়, এই দম্পতি জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড ভ্রমণে আসেন। তাদের পর্বত অভিযানের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা সে জন্য যথাযথ প্রস্তুতিও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু অভিযান শুরু হওয়ার পর পরই তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ নিহতের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। পাভলিনা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর লেক ম্যাকাঞ্জিতে পৌঁছাতে তিন রাত লেগে যায় তার। আনুমানিক ৩১ জুলাই ২ কিলোমিটার পথ পার হয়ে তিনি ওই কুঁড়েঘরে পৌঁছান তিনি।ঘরটি তালাবদ্ধ ছিলো। তিনি তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকেন এবং ওই ঘরে সংরক্ষিত খাদ্য ও জ্বালানি ব্যবহার করেন।
ওই ঘরে পাহাড়ি এলাকায় ব্যবহারের জন্য বিশেষ ধরনের রেডিও থাকলেও তিনি তা ব্যবহার করতে পারেননি। এই এক মাসে তিনি ঘর থেকে বের হতেও পারেননি। কেননা তার নিজের শরীরে গুরুতর আঘাত ছিলো এবং বাইরে ছিলো প্রবল তুষারপাত।
পাভলিনা এক সময় জমে থাকা তুষারের ওপর একটি ‘এইচ’ অর্থাৎ ‘হেল্প’ লিখে রাখেন যেন আকাশ থেকে কেউ তা দেখতে পায়। এ ছাড়া নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য আর কিছুই করতে পারেননি তিনি।
কর্তৃপক্ষ জানায়, রুটবার্ন ট্র্যাকটি মাঝারি ধরনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পর্বতারোহীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ওই ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকটি বেয়ে উঠতে সাধারণত তিন থেকে চারদিনের বেশি লাগে না। শীতকালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ থাকলেও অনেকেই এটি দিয়ে পাহাড়ে ওঠে। পথটি যথেষ্ট নিরাপদ করে তৈরি করা হয়েছে এবং পথের বাঁকে বাঁকে আরোহীদের জন্য ছোট ছোট কুঁড়েঘর বানিয়ে রাখা আছে।
নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে বলা হয়, শীতকালে সাধারণভাবে এই পথটি একটু বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
এতে আরও বলা হয়, শীতকালে এই পথ বেয়ে উঠতে হলে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে ও পায়ে হেঁটে উঠতে হবে।
ওটাগো ট্রাম্পিং অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের মুখপাত্র ইয়ান সিম বলেন, তিনি কখনই এই পথ থেকে কোন পর্যটক বা পর্বতারোহীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কথা শোনেননি। এই ঘটনাটিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি হতবাক, বুঝতে পারছিনা এটা কিভাবে হলো! এমনকি শীতের দিনেও দলে দলে মানুষ এই পথ দিয়ে চলাচল করে, কুঁড়েঘরে থাকে।’
তিনি আরও জানান, এই ট্র্যাকটির বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিতি নেই, বরং একে পর্বত অভিযানে যাওয়ার জন্য একটি তুলনামূলকভাবে সহজ পথ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
মন্তব্য চালু নেই