পরোয়ানা থানায় পৌঁছামাত্র খালেদাকে গ্রেপ্তার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিস তল্লাশীর নির্দেশনামা এবং তাকে গ্রেফতারের পারোয়ানা যখনই থানায় পৌঁছাবে সেই মুহূর্তে ওখানে তল্লাশী করা হবে এবং তখনই তার গ্রেফতারের ব্যবস্থাও করা হবে। আইন মোতাবেক যে অপরাধই করুক তার বিচারের ব্যবস্থা করা হবে এবং সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যে, আাইন তার নিজস্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি বলেই উনার হরতাল অবরোধের এখন আর কোনো ধার নেই, কেউ মানে না, ভবিষ্যতে এইটুকুও মানবে না, কোন কিছুই মানবে না। এখন আন্দোলন নাই। আছে চোরাগোপ্তা মানুষ খুন করা।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

বিকেলে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

এম এ আউয়ালের এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালন নির্দেশ দিয়েছে গুলশানের অফিস তল্লাশী করতে। এই নির্দেশনামা যেই মুহূর্তে গুলশান থানায় পৌঁছাবে তখনই পুলিশ যথযাথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এটা করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ উনি বাড়ি ছেড়ে কেন অফিসে বসে আছেন এটা একটা রহস্য। আাসলে বিএনপি নেত্রী এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন। তিনি এখন জঙ্গী নেত্রী। তিনি যে কাজটা করছেন তা সম্পুর্ণ জঙ্গীবাদী কাজ। কোন সুস্থ্য মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে না। নিজের পুত্র যে দিন মারা গেছে, লাশ এসেছে সেদিনও তিনি অবরোধ তুলেননি, হরতাল প্রত্যাহার করেননি। নিজের ছেলের প্রতি যার এতটুকু দরদ নাই তার কাছ থেকে দেশবাসী কী আশা করতে পারে। মনে হয় তিনি এদেশে একটা জঙ্গী শাসন কায়েম করতে চান। কাজেই মানুষের জানমাল কেড়ে নেয়া, মানুষকে পুড়িয়ে মারা, দেশের ক্ষতি করা- এই একটাই তার কাজ।

বাহাউদ্দিন নাসিমের এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আইনের কোনো অভাব নেই। তাছাড়া ট্রাইব্যুনালও গঠন করা আছে। কাজেই আইন তার আপন গতিতে চলবে। এইটুকু আমি বলতে পারি, কেউ আইনের ঊর্ধে নয়, এতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ এটা জনগনের আকাংখা, জনগণই তা চায়। জনগণ যা চাইবে তাই হবে। আইন তার আপন গতিতে চলবে।

নূর জাহান বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসিকে আজ সচেতন হতে হবে। যারা দেখবে যারা সন্ত্রাসী বা জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ইতিমধ্যেই কিন্তু জনগণ স্বত:স্ফুর্তভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এদেরকে ধরিয়ে দিলে সাথে সাথে পুরস্কারও পাচ্ছে। জনগণকে এ ব্যাপারে আরো শক্তিশালী হতে হবে। জনগণকে আরো সজাগ হতে হবে। জনগণ এ ব্যাপারে যথার্থ ব্যবস্থা নিতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী যেটা করছেন সেটা বলতে গেলে তিনি একটা গণহত্যার কাজে নেমে গেছেন। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেয়া, রাস্তাঘাটে আগুন দিয়ে মানুষকে মারা এবং উনি যে এগুলো সরাসরি করে যাচ্ছেন এতোতো কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরনের কাজ কোন মানুষ করতে পারে- এটা কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেখানে জনগণের জন্য রাজনীতি সে জনগণকে হত্যা করে কী অর্জন করতে পারে সেটাই প্রশ্ন। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা নিচ্ছি। পাশাপাশি আজকে জনগণ যে সচেতন হয়েছে, গণধোলাই দিচ্ছে। যারা এ ধরণের কর্মকাণ্ড করতে পারে এমন সন্দেহভাজন লোকদের সম্পর্কে থানায় জানালে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করছে। দিন রাত তারা কঠোর পরিশ্রম করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তাদেরও সহযোগিতা করা জনগণের কর্তব্য। তিনি আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান।

মো: শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গী নেত্রী খালেদা জিয়া সাইকেল বোমা বানানো, পেট্রলবোমা বানানো, বিভিন্ন ধরনের গান পাউডার দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, উনি সেই শিক্ষা দিচ্ছেন। সেখানেই অর্থ ব্যয় করছেন। মানুষকে ব্যবহার করছেন। মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। শুধু দেশ নয় বিদেশেও দেশের ভাবমুর্তি তারা নষ্ট করছেন। তবে আশার কথা হলো, জঙ্গীনেত্রীর চেহারা আজকে মানুষ বুঝে গেছে, জেনে গেছে। বিদেশীরাও আজকে বুঝতে পেরেছে। তিনি যে পরমুখাপেক্ষী হয়ে এতোদিন বসেছিলেন যে কেউ এসে উনাকে একেবারে ক্ষমতার দুয়ার খুলে বসিয়ে দেবেন সেটা এখন আর হচ্ছে না। বরং যাদের দিকে মুখ করে বসে র্তারাই এখন তাকে বলে যে, জঙ্গী কর্মকাণ্ড মানুষ খুন করা এগুলো আপনি বন্ধ করেন। তবে আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন মোতাবেক যে যে অপরাধই করুক তার বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যে আাইন তার নিজস্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কাজেই জঙ্গীবাদের স্থান বাংলাদেশে নাই। জঙ্গীবাদ বাংলাদেশে চলবে না। বাংলাদেশের মানুষও তা চায় না। জঙ্গীবাদ দমনের জন্য, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবার জন্য আদালত থেকে যে নির্দেশ এসেছে সেই নির্দেশমতো অবশ্যই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং সরকার কাজ করবে। সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মো: শওকত চৌধুরীর এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীকে এই পরামর্শটা দিলে বোধ হয় উনি খুশি হবেন রোজ রোজ ঘোষণার দরকার কী, একবারই ২০১৯ সাল পর্যন্ত হরতাল ঘোষণা দিয়ে বসে থাকুক। তবে এটা ঠিক আজকে বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তার এই হরতাল অবরোধ প্রত্যাখান করেছে। কারণ মানুষের জীবন চালানো এটা হচ্ছে সব থেকে প্রয়োজন। জীবন জীবিকার তাগিদে আজকে মানুষ ঝুকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তারা কাজ করছে। এই জঙ্গীবাদী এবং মানুষ পোড়ানো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিচ্ছি। আর পদক্ষেপ নিচ্ছি বলেই উনার হরতাল অবরোধের এখন আর কোনো ধার নেই, কেউ মানে না, ভবিষ্যতে এইটুকুও মানবে না, কোনো কিছুই মানবে না। এখন আন্দোলন নাই। আছে চোরাগোপ্তা মানুষ খুন করা। সেখানে জনগণ পারলে ধরে ফেলছে, গণধোলাই দিচ্ছে, পুলিশে সোপর্দ করছে।

এম এ আউয়ালের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৬৪ দিন ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, দেশের নিরপরাধ সাধারণ নারী পুরষ এমনকি নিস্পাপ শিশুদেরকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে। পৃথিবীর নিকৃষ্টতম হত্যা প্রক্রিয়া হলো আগুনে পুড়িয়ে মারা। আর সে প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা আরোহনের চেষ্টা কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ হতে পারে না। তিনি ৬৪ দিনে ১১৯ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হওয়াসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এই নৈরাজ্য দীর্ঘদিন চলতে দেয়া যায় না। দেশের আইন শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর আছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে তারা আরো কঠোর হবে।
প্রধানমন্ত্রী আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কলেবর বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার ফলে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মাত্রা আরো অনেক কমে এসেছে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে দূরবর্তী এলাকার বাস কিছুটা কম চলছে। হরতাল এবং অবরোধের দিনে ঢাবাবাসীকে প্রচণ্ড যানজটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিএনপি নেত্রী যে দাবি দাওয়া দিয়েছেন তা সবই

তার নিজের ও পুত্রের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তার কোনো চিন্তা নেই, দাবিও নেই। তাই জনগণ এখন তাকে একেবারেই সমর্থন করে না বরাং জনগণ তার প্রতি ক্ষুব্ধ। আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ না দিলে বহু আগেই জনগণ তাকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করে দিতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দলের নেতাকর্মীরাও তার সাথে নেই। বিএনপি-জামায়াত নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে অফিসে বসে নাশকতামুলক কাজ করছেন। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি জামায়াত নেত্রী দেশের আইন মানেন না। কোর্ট থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে দেশের যে কোনো নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে কোর্টে আত্মসমর্পন করা। আর দায়িত্বশীল নাগরিক অতি দ্রুততার সাথে কোর্টের আদেশ মান্য করবেন এটাই সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কোর্টের আদেশ অমান্য করে একটি অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করছেন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে; আর আইনকে সমুন্নত রাখা সরকারের দায়িত্ব।



মন্তব্য চালু নেই