৫ ভাগের দখলে ৬৫ ভাগ রাস্তা, ১০ বছরে নিহত ৪৬৯৯১

‘পরিবার নিয়ে গণপরিবহন ব্যবহার করা যায় না’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. আবদুর রহিম বলেছেন, ‘অত্যন্ত জরুরী হওয়ার পরও ঢাকা মহানগরের গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারেন না।’

‘সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ-সিপিপিআরবি এবং নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি-এনসিপিএসআরআর মঙ্গলবার এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

প্রফেসর আবদুর রহিম বলেন, ট্যাক্সিক্যাব ও প্রাইভেট গাড়িগুলোই মহানগরের যানজট বাড়িয়ে তুলেছে। এ সব গাড়ির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ঢাকা মহানগরের রাস্তায় গণপরিবহন চলাচলের ওপর বেশি জোর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট নিরসন ল এ্যান্ড অর্ডারের ইস্যু হতে পারে না। এ সব সমস্যা বিজ্ঞানের আলোকেই সমাধান করতে হবে।’

রাজধানী ঢাকার কমরেড মনি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, এ্যাডভোকেট তাছমিন রানা, নবাব কাটরা সমাজকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি হাজী মো. শহীদ ও সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিপিপিআরবির সভাপতি তুষার রেহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনসিপিএসআরআর’র আহ্বায়ক আশীষ কুমার দে।

প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ‘দেউলিয়া রাজনীতির কারণে পরিবহন সেক্টরে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে। ঘটছে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সন্ত্রাসের কারণে যাত্রীরা নিরাপদ নয়। এর আগে পরিবহন জগতের অনেক দুর্নীতি, অনিয়ম ও দুর্ঘটনাকে স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতাদের কল্যাণে এ দেশের সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু মাইক্রোবাসের মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা কোনোভাবেই আমাদের সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।’

এ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির মোকাবেলা করা ছাড়া পরিবহন জগতের নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। ভিআইপিরা তথাকথিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ করে লাখ লাখ মানুষের লাখ লাখ শ্রমঘণ্টা কেড়ে নিচ্ছেন। অথচ এর কোনো প্রতিকার নেই। অসাধু রাজনীতির কবলে পড়ে মহানগরের রাস্তার দুই পাশের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত কত কিলোমিটার জায়গা বেদখল হয়েছে তার একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করা উচিত। সরকার না করলে বেসরকারি উদ্যোগেই এ শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।’

এ্যাডভোকেট তাছমিন রানা বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিচারহীনতার কারণেই দেশের পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য বাড়ছে।’

সভাপতি হাজী মো. শহীদ বলেন, ‘অবৈধ ও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সের পার্থক্য করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যে সব লাইসেন্স ড্রাইভারদের হাতে রয়েছে তার ৬০ ভাগই দুই নম্বর।’

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘মালিক-শ্রমিক ঐক্যের নামে মালিকদের স্বার্থরক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ ঐক্য শাসকগোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

সভাপতির বক্তব্যে তুষার রেহমান বলেন, ‘পাঁচ ভাগ প্রাইভেটকার ঢাকা মহানগরের রাস্তার ৬৫ ভাগ দখল করে থাকে। কারগুলোর কারণে মূল্যবান গ্যাসেরও অপচয় হচ্ছে। প্রাইভেটকারে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগরের যানজট কমে যাবে এবং জাতীয় সম্পদ গ্যাসের অপচয় বন্ধ হবে।’

আশীষ কুমার দে লিখিত প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ হাজার ৯৯১ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সড়কের মোট ৪৪ হাজার ৭৯টি দুর্ঘটনায় মোট ৭০ হাজার ৯০৮ মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের ৬০ ভাগই হাত-পা বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছেন। ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৯৯৭টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৭৯৮ জন নিহত এবং ১৮ হাজার ১১৩ জন আহত হয়েছেন।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার ৬৫ ভাগই ঘটে গ্রামের মহাসড়কগুলোতে। শহরের মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার ৩৫ ভাগ।’

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরাতে তিনি বলেন, ‘পরিবহন চালকের মধ্যে ৬১ ভাগই অবৈধ। দেশের ১৪ লাখ নিবন্ধিত পরিবহনের বিপরীতে বৈধ চালকের সংখ্যা নয় লাখ। সাড়ে চার লাখ চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই।’



মন্তব্য চালু নেই