পদ্মার ২০ মাইল চর পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা! নাকাল শিক্ষার্থীরা

সীমানা জটিলতায় পদ্মার এপারে পাবনার সীমানায় কুষ্টিয়ার এলাকা থাকায় মহাবিপাকে পড়েছে সাদীপুর আলিম মাদরাসার ১ হাজার ৫শ শিক্ষার্থী। পদ্মার এপার থেকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে তাদের পাড়ি দিতে হয় ২০ মাইল দুর্গম পদ্মা নদী ও বিস্তীর্ণ চর।

তবে এতো কষ্টের পরেও প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা ছিনিয়ে আনে জেলার প্রথম স্থানের সুনাম। প্রতি বছরই বোর্ড পরীক্ষায় পাশ করে শতভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর এপারে পাবনার সীমানা সংলগ্ন কুষ্টিয়ার সাদীপুর গ্রাম এবং ওপারে শিলাইদহের ঘাট। এপার থেকে ওপার ৭ মাইল। কোথাও পানি আছে আবার কোথাও বিস্তীর্ণ বালুর চর। এই গ্রামে ১৯৬৮ সালে গড়ে উঠেছে সাদীপুর আলিম মাদরাসা। বর্তমানে এখানে পড়ালেখা করছে ১ হাজার ৫শ শিক্ষার্থী।

এলাকাটি চরাঞ্চল হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান। কারো বাবা দিনমজুর আবার কারো বাবা রিকশা-ভ্যানচালক। এসব শিক্ষার্থীকে বোর্ড পরীক্ষা দিতে ২০ মাইল যেতে হয় পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায়। এর মধ্যে ১০ মাইলই পায়ে হেঁটে পদ্মার বালুর চর পাড়ি দিতে হয়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে যায়, কেউ কেউ হয়ে যায় অসুস্থও।

অথচ মাদরাসা থেকে পাবনা শহর মাত্র ৩ মাইল দূরে। এখানে নেই চর ও নদী। মাদরাসা পাশ দিয়ে পাকা সড়ক গিয়ে যোগ হয়েছে শহরে।

২০১৪ সালে খুলনা বিভাগে ফলাফলের দিক থেকে ২য় স্থান অর্জন করেছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৮০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৮০ জনই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এবারও জেডিসিতে বৃত্তি পেয়েছে ১০ শিক্ষার্থী। বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে জেলার শীর্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবুও সীমানা জটিলতার কোনো সমাধান পায়নি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

পাবলিক পরীক্ষার সময় এলেই এসব শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। অনেক পরিবার মেয়েদের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ঝামেলা এড়াতে বন্ধ করে দিচ্ছেন পড়াশুনাই। ফলাফল বাল্যবিবাহ। এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের বাবা-মা তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা দেয়ার স্বপ্ন থাকালেও শুধু সীমানা জটিলতায় সেই স্বপ্ন যেন ম্লান হতে বসেছে।

দশম শ্রেণির ছাত্রী আদিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি জেডিসি পরীক্ষা দিয়েছি অনেক কষ্টে। এতো দূরে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া খুবই কষ্টের। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলে পায়ের তালু ফুলে যায়। আবার পরীক্ষা সেন্টারের আশপাশে কোনো মেস পাওয়া যায় না। সেখানে আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই। আমাদের পরীক্ষা সেন্টার পাবনা শহরে হলেই অনেক ভাল হয়।’

নবম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম খাতুন মিম বলেন, ‘আমি পদ্মার চর পাড়ি দিতে পারি না। অনেক কষ্টে জেডিসি পরীক্ষা দিয়েছি। সময় মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’ দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র যেন পাবনায় হয় সেই দাবি করে মিমও।

মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সমস্যা সমাধানে পাবনা শহরে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থানান্তর করতে কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলা প্রশাসন একমত। তবে কেন্দ্র স্থানান্তরের জন্য উভয় জেলার প্রশাসন বোর্ডে বার বার আবেদন করলেও বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। তিনি অবহেলিত এই চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা কেন্দ্রটি পাবনা শহরে স্থানান্তরের জন্য দাবি জানান।



মন্তব্য চালু নেই