পঞ্চমবার ব্যয় বাড়লো ৬২৬ কোটি টাকা

সময়ের সঙ্গে ব্যয় বাড়ছে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের। এবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রকল্পটিতে সংশোধনী আনা হলো। কুমিল্লার দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার মহাসড়কে উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটিতে ফের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

এবার প্রকল্পটিতে ৬২৬ কোটি ৬৪ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে এর ব্যয় ৩ হাজার ১৯০কোটি ২৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। একই সঙ্গে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে ২ বছর। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি পেশ করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। জানুয়ারি ২০০৬ থেকে জুন ২০১২ সাল নাগাদ। এরপর প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। পরেরবার বিশেষ ডিপিপিতে বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৪১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অবশ্য এ সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

অন্যদিকে তৃতীয়বারের মতো প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ১৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এবং মেয়াদ করা হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর। এভাবে একে একে পঞ্চমবার ব্যয় ও সময় বাড়ানো হলো।

প্রকল্পটিতে ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো : বর্ষার সময় অতিবৃষ্টি, সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন- পাথর সঙ্কট, অর্থ সঙ্কট, বর্ষা, মাটি সঙ্কট ও বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ইঞ্জিনিয়ার ইবনে আলম হাসান বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ সঠিকভাবে শেষ করার জন্য সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করি, এবার পুরোদমে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। যে সময় বাড়ানো হয়েছে তার মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ করতে পারবো।’

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়, প্রকল্পের ১০টি সড়ক প্যাকেজের আওতায় ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৪৩ কিলোমিটারে পেভমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ। মাটির কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতুর মধ্যে ২০টি সেতু এবং ২৪২টি কালভার্টের মধ্যে ২৪০টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। চার লেনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি অংশে ৭ কিলোমিটার কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে, প্রকল্প এলাকায় নতুন ছয়টি বাজার অংশ যোগ করা হয়েছে। এগুলো হলো : ছোট দারোগার হাট, সীতাকুণ্ড বাইপাস, কদম রসুল বাজার, বিএমএ গেট ও পোর্ট কানেকটিভিটি সড়ক। এসব সড়কে রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এ খাতে ১৩৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। নিরাপদ ট্রাফিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

এই ফোরলেনের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। পাঁচ মিটার প্রশস্ত মিডিয়ানের মাঝখানে ঝোপ আকৃতির বৃক্ষরোপণ করা হবে যাতে করে রাতে অপর পাশ থেকে আলো এসে গাড়িচালকের সমস্যা করতে না পারে। গাছের পরিচর্যা এবং স্থায়িত্বের নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাঁচ বছর গাছগুলো যাতে করে পরিচর্যা করা যায় সেই বিষয়ে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হবে বলে সড়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।

এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার শাসনগাছায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক দুটি ফেনীর মহিপালে মিলিত হয়েছে। এখানে ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৩৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ৬ লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।



মন্তব্য চালু নেই