পঞ্চদশ সংশোধনী মৃত বাকশালের প্রেতাত্মা

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে মৃত বাকশালের প্রেতাত্মা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভরাডুবির বিপদ টের পেয়েই আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বলেও দাবি বিএনপি চেয়ারপারসনের।

‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে রোববার দুপুরে দেয়া এক বাণীতে এমনটাই মন্তব্য করেন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি চেয়ারপারসন তার বাণীতে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার লক্ষ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা “বাকশাল” কায়েম করে। এই ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে তারা জাতীয় সংসদে বিরোধী মতামতকে উপেক্ষা করে এক প্রকার গায়ের জোরেই অমানবিক মধ্যযুগীয় চতুর্থ সংশোধনী আইন পাস করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী মানুষের বাক, ব্যক্তি, চলাচল ও সমাবেশের স্বাধীনতাসহ সকল মৌলিক অধিকার হরণ করে। সব সংবাদপত্র বাতিল করে তাদের অনুগত চারটি প্রকাশনা চালু রাখার ফরমান জারি করে। এর ফলে চিরায়ত গণতন্ত্রের প্রাণশক্তিকেই তারা সেদিন নিঃশেষ করে দেয়। দেশবাসীর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলে অর্জিত মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তারা ভুলুণ্ঠিত করে সমাজে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের ঘন অমানিশা ছড়িয়ে দেয়।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এমনি এক দুঃসময়ে পচাত্তরের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার সম্মিলিত শ্রোত-ধারায় শহীদ জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। স্বেচ্ছাচারীতার লৌহ কপাটের ভিতর থেকে তিনি গণতন্ত্রকে অর্গলমুক্ত করেন। পুনরায় শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। নিশ্চিত হয় মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার।’

বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘বহু চক্রান্তের চোরাগলি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এখন আবারও অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোট বাকশালী চেতনায় নতুন করে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রকে ভূগর্ভে সমাহিত করে ফেলেছে। এদের ঐতিহ্যই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার বিপন্ন করা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের ভরাডুবির বিপদ টের পেয়ে তারা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। পঞ্চদশ সংশোধনী হচ্ছে মৃত বাকশালের প্রেতাত্মা, যা বর্তমানে ভয়াল দুঃশাসনের আত্মপ্রকাশকে প্রণোদিত করেছে।’

পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে তিনি এও বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীকে একচেটিয়া ক্ষমতা দিয়ে মূলত গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করে তার ওপর একক কর্তৃত্ত্ববাদী নির্দয় শাসনের ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। কথা, চিন্তা, বিবেক, মত প্রকাশ, সংগঠন ও সমাবেশের স্বাধীনতা তথা সামগ্রিকভাবে মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে এই সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় দুঃশাসন কায়েম করে। বহুত্ত্ববাদিতা বিনষ্ট করে সামাজিক স্থিতি ও ভারসাম্য নষ্ট করা হয়েছে। তাই এখন সর্বত্রই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দখলবাজদের দখলের জয়জয়কার চলছে। অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা, আশ্রয়, পেশা, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু এখন নৈরাজ্যের করাল গ্রাসে নিপতিত। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আরেকটি কালো অধ্যায় এবং এই সংশোধনীর প্রণেতারা জনগণ, রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের শত্রুপক্ষ।’

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘একদলীয় বর্বর শাসন দীর্ঘায়িত করার অলীক স্বপ্নে শুধু গণতন্ত্রই নয়-দেশের ঐক্য, সংহতি ও সার্বভৌমত্বকে তারা সঙ্কটাপন্ন করে তুলতেও দ্বিধা করেনি। বিরোধী দলের প্রতি আচরণে তারা কখনই সভ্য রীতি-নীতি অনুসরণ করেনি। সুতরাং নব্য বাকশালী জগদ্দল পাথরকে অপসারণ করার লক্ষ্যে জনগণ আজ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, আবারও কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে চেপেবসা গণতন্ত্র-বিরোধী-শক্তিকে পরাভূত করে আমাদের রক্তস্নাত বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই