নোয়াখালীতে জোয়ারের পানিতে শত শত গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে নোয়াখালীর তিনটি উপকূলীয় (হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর) উপজেলায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার না করায় প্রতিদিন জোয়ারের পানি প্রবেশ করে শত শত গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার গ্রামবাসী পানিবন্দি হয়ে চরম মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন।

গত ২১ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে নোয়াখালীর তিনটি উপকূলীয় উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক পানিবন্দি হয়। জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে মেঘনা নদীর পানি জোয়ারের চাপে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় উঠে আশপাশে বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। প্রবল জোয়ারের পানির প্রবাহে মাটি দিয়ে তৈরি বেড়িবাঁধ ভেঙে শত শত নিম্নাঞ্চলের গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়।

এদিকে, গত ২০ দিন অতিবাহিত হলেও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী, মুছাপুরের গুচ্ছগ্রামের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার না করায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে প্রতিদিন জোয়ারের পানি প্রবেশ করে শত শত গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। আশপাশ এলাকার স্কুল, মসজিদ, রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে এ এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

সরেজমিনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের চরলেংট্যা, চরকলমীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা দেখা গেছে, দিনে-রাতে দুইবার জোয়ারের ফলে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে বাড়ি ঘর তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আশপাশের স্কুল-মাদরাসা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।

চরলেংটার গ্রামের তিন সন্তানের জননী ছালমা বেগম জানান, ২০ দিন আগে ঝড়ের কারণে বাঁধভেঙে তাদের বসতঘর পুরোটাই পানির নিচে চলে যায়। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনো রকম বাঁধে উঠে অন্যস্থানে আশ্রয় নেয়। পরে মন্ত্রী এসে শুকনো খাবার দিয়ে যায়। কিন্তু তাতে কি লাভ। বাঁধ যদি নির্মাণ না করে দেয় তাহলে সামনে অরো ঝড় বা বড় ধরনের জোয়ার আসলে মরা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না।

একই এলাকার ইমাম উদ্দিন সবুজ নামে আরো এক যুবক জানান, জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে প্রায়ই বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের রোগ লেগেই আছে। ঠিকমতো রান্না করতে না পারায় অনেকে অর্ধাহারে-অনাহারেও দিন কাটাচ্ছে।

চরএলাহী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন সৃষ্ট রোয়ানুর চিত্র তুলে ধরে বলেন, এটি রাতের বেলায় আসলে কত যে প্রাণহানি ঘটতো তার কোনো হিসেব থাকতো না। বর্তমান ভেঙেবাঁধগুলো দ্রুত সময়ে সংস্কার না করা হলে সামনে বর্ষকাল। এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, রোয়ানুর আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৯কি. মি. কোম্পানীগঞ্জের ১৩শ মিটারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে রেগুলেটারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাতিয়ায় ইতোমধ্যে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো সংস্কার কাজ চলছে। কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজারের বেশ কয়েকটি ফাটল সংস্কার করা হয়েছে। তবে গুচ্ছগ্রাম ও চরএলাহীর ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো চাহিদা মাফিক বরাদ্দ পেলে সেগুলো ও সংস্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই