নোবেল পাচ্ছেন রেঞ্জ অফিসার!

ভারতের উত্তরবঙ্গের বেলাকোবার সেই ডাকাবুকো রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত। যাকে যমের মতো ভয় পায় চোরাশিকারিরা। ডাকাবুকো হিসাবে তাকে এক কথায় চেনে সমগ্র বন দফতর। ফিল্মের কায়দায় ছদ্মবেশে ২৫০ কোটি টাকার সাপের বিষ-সহ পাচারকারীদের পাকড়াও করে হয়ে উঠেন বন দফতরের হিরো। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।

এটুকু আর কী? গত এক বছরে তার লাগাতার অভিযানের ‘সিজার লিস্ট’-এ রয়েছে ১৬৬ জন আসামি, ৭০ জন কাঠ পাচারকারী, ৬৬টা গাড়ি, ১৯টি চিতাবাঘের চামড়া, তক্ষক ৩৭টি, বাঘের হাড় ৮০০ কেজি, ১৪ কেজি হাতির দাঁত, রেডস্যান্ড বোয়া বা ময়াল সাপ ১৪টি, প্যাঙ্গোলিন ৬টি এবং আরও কত কী। তাঁর একটানা হানাদারির চাপে নাকে খত দিয়ে ‘লাইন’ ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে অন্তত ৭০ জন কাঠচোর।

ভারতের উত্তরবঙ্গের বেলাকোবার সেই ডাকাবুকো রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্তকে নিয়ে ক’দিন আগেই অবশ্য বেশ পানি ঘোলা হয়েছে রাজ্য বন দফতরের অন্দরমহলে। সরকারি লাল ফিতের ফাঁসে তার ‘নোবেল’ পুরস্কার নিতে যাওয়া আটকে যাওয়ায়।

ঘটনার সূত্রপাত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে। বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সম্মান ‘ক্লার্ক আর বাভিন ওয়াইল্ডলাইফ ল এনফোর্সমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য নির্বাচিত হন সঞ্জয়বাবু। এই পুরস্কারকে বন্যপ্রাণ রক্ষা ও চোরাশিকারের বিরু‌দ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ‘নোবেল পুরস্কার’ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

নোবেল কমিটির ধাঁচেই প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর কাছ থেকে মনোনয়নের জন্য নাম চাওয়া হয়। নামের সঙ্গে পাঠাতে হয় গত এক বছরের কাজের বিবরণ। সেই তালিকা ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে নির্বাচন করা হয় পুরস্কার প্রাপকদের।

এই পথেই চলতি বছর এই সম্মানের জন্য ভারত থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তরুণ রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত এবং মধ্যপ্রদেশ বন দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর রীতেশ সারোথীয়। সেই সুসংবাদ জানিয়ে অন্যতম উদ্যোক্তা ‘অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ইনস্টিটিউশন’-এর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ক্যাথি লিজের স্বাক্ষরিত চিঠিও চলে আসে দু’জনের কাছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘৩ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গে কনভেনশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জার স্পেসিসেস-এর আসরেই সম্মান তুলে দেওয়া হবে।’

পানিঘোলা শুরু হয় তারপরই। নিয়ম অনুযায়ী কোনও সরকারি কর্মীকে বিদেশ যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেইমতো উপরমহলে সবকিছু জানিয়ে চিঠিও পাঠান সঞ্জয়বাবু। সেই অনুমতি যাতে মেলে, তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্ট বৈকুণ্ঠপুরের ডিএফও প্রিয়রত্ন প্রধান থেকে উত্তরবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল পপ পেরিং ভুটিয়া। কিন্তু তার পরও জোহানেসবার্গ যাওয়া হয়ে ওঠেনি সঞ্জয়ের।
বনকর্মীদের অভিযোগ, রেঞ্জ অফিসারের মতো একজন নিচুতলার আধিকারিকের এহেন আন্তর্জাতিক সম্মানপ্রাপ্তিতে উচ্চপদস্থ কোনও কোনও বনকর্তা নিতান্তই ‘অখুশি’।

ফেডারেনের অন্যতম নেতা অংশুমান তরফদারের অভিযোগ, “নিন্দার কোনও ভাষা নেই। যদি কোনও আইএফএস আধিকারিক এই পুরস্কার পেতেন, তবে উপরমহলের ভূমিকা অন্যরকম হত। এই ঘটনা নিচুতলার মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।”

শেষপর্যন্ত অবশ্য অশান্তির আগুনে পানি ঢালার উদ্যোগ নিয়েছেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। বুধবার জলপাইগুড়ির বোদাগঞ্জে নিজে উপস্থিত থেকে জোহানেসবার্গ থেকে আসা পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন সঞ্জয় দত্তের হাতে।



মন্তব্য চালু নেই