নেপাল পালন করছে ভূমিকম্পের প্রথম বর্ষ

শত বছরের ইতিহাসে ভয়াবহতম ভূমিকম্পের বর্ষপূর্তির একদিন আগে রবিবার নিহত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে পুরো নেপাল। এক বছর পরও গৃহহীন থেকে যাওয়া লাখো মানুষের হতাশার প্রেক্ষাপটে দিনটি স্মরণ করে হিমালয় কোলের দেশটি। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ছাড়াও অশান্ত রাজনীতির কারণে ভূমিকম্প-পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা উপেক্ষিত থেকেছে।

২০১৫ সালের এই দিনে নেপালে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির হিসাবে, ওই ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় নয় হাজার মানুষ। আহত হয় বেশ কয়েক হাজার। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখনও ত্রাণের তাঁবুতে বা অস্থায়ী বাসস্থানে বাস করছে।

রবিবার ভূমিকম্পে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রাজধানী কাঠমান্ডুতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯ শতকের ধারাহারা টাওয়ারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। সমবেত কয়েক হাজার মানুষ এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পাশের একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া বৌদ্ধমন্দিরে ভিক্ষুরা বিশেষ প্রার্থনা করেন।

এক বছর আগের সেই প্রলয়ে প্রায় থমকে যায় সারা দুনিয়া থেকে আসা পর্বতারোহীদের গাইড গোবিন্দ তিমিলসীমার জীবন। আইনি নানা ঝামেলায় সরকারের ত্রাণের নাগাল পাননি তিনি। গোবিন্দ বলছিলেন, ‘আমার গ্রামে ফিরে যাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। আমরা সবকিছুই হারিয়েছি।’

২৮ বছর বয়সী গোবিন্দের গ্রাম ভূমিকম্পে গুঁড়িয়ে গেছে। এখন মা, স্ত্রী এবং তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে কাঠমান্ডুতে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তাঁর।

প্রলয়ংকরী ওই ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ৪০০ কোটি ডলারের বেশি ত্রাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় নেপালকে। নতুন সংবিধান নিয়ে গুরুতর রাজনৈতিক অচলাবস্থায় এই অর্থ যথাযথভাবে সংগ্রহ বা যতটুকু পাওয়া গেছে এর সঠিক বণ্টন হয়নি। ভূমিকম্পে ধ্বংস হয় ৮ হাজার স্কুল, ১২০০ হাসপাতাল। গৃহহীন মানুষদের প্রতিশ্রুত দুই হাজার ডলার সহায়তার মধ্যে প্রথম দফায় ৫০০ ডলার করে দেওয়ার কাজ অবশ্য শুরু হয়েছে।

রবিবার কাঠমান্ডুতে শোকপর্ব চলার সময়ে সরকারি কাজের দীর্ঘসূত্রতার প্রতিবাদে কালো পোশাক পরে জড়ো হন ২০ জন মানুষ। তাদের কণ্ঠে স্লোগান ছিল, ‘রাজনীতিবিদেরা প্রাসাদে, আমরা তাঁবুতে’, ‘ঘর তৈরি করে দেওয়ার কী হলো?’



মন্তব্য চালু নেই