নিলয়ের জিডি না নেয়ার বিষয়ে ডিএমপির তদন্ত কমিটি

খিলগাঁওয়ের পূর্ব গোড়ানে তরুণ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় গতকাল শুক্রবার খুন হওয়ার প্রায় তিন মাস আগে নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ জিডি নেয়নি। বিষয়টি গত ১৫ মে পোস্ট করা তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে।

তবে নিলয়ের এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এ বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত-উপ কমিশনার (এডিসি) তারেক বিন রশিদকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী কমিশনার (এসি) মো. নুর আলম ও কাজী ফরিদ হোসেন।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ব্লগার নিলয় নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। সেটি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নিলয় তার ফেসবুকে কোন থানায় গিয়েছিলেন সেটি উল্লেখ করেননি।

তিনি আরো জানান, নিলয় কোন থানায় গিয়েছিলেন, কেনো জিডি নেয়া হয়নি সে বিষয়গুলো তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। জিডি না নেয়ার ঘটনায় যদি কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে নিলয়ের স্ত্রী আশামনি ও বন্ধু দেবজ্যোতি জানিয়েছেন, হামলা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় গেল মে মাসেই পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন নিলয়। তবে পুলিশ তাকে দ্রুত দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায় সারে। ১৫ মে এসব জানিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন নিলয়।

তাদের অভিযোগ, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিলয় রাজধানীর খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে সেটি নিতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। এমনকি নিরাপত্তা দেয়ার বদলে পুলিশ তাকে পরামর্শ দিয়েছে বিদেশে চলে যেতে। পুলিশ যদি নিলয়কে নিরাপত্তা দিতো তবে চরমপন্থিরা এভাবে তাকে হত্যা করতে পারতো না।

নিলয়ের স্ত্রী আশামনি বলেন, ‘অন্য ব্লগারদের হত্যার বিচার হয়নি বলেই চরমপন্থিরা সাহস পাচ্ছে একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করতে। তারা (পুলিশ) খুনিদের ধরতেও পারে না, আবার নিরাপত্তা চাইলে নিরাপত্তাও দিতে পারে না। এমন পুলিশ রেখে লাভ কী?’

নিলয়ের বন্ধু দেবজ্যোতি অভিযোগ করে বলেন, ‘নিলয়কে কেউ অনুসরণ করছে এই বিষয়টি সে টের পায়। এতে সে শঙ্কিত হয়ে আমাকে জানায়। এরপর আমরা প্রথমে খিলগাঁও থানায় এবং পরে শাহজাহানপুর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করতে যাই। কিন্তু তারা জিডি নেয়নি।’

তবে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া মো. মোস্তাফিজ ও শাহজাহানপুর থানার ওসি মেহেদী হাসান এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। নিলয় পুলিশের কাছে যাননি বলে তাদের দাবি।

নিলয়ের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলামকে অবহিত করলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ যদি জিডি না নিয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই