আ.লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি : তৈরি হচ্ছে এমপিদের আমলনামা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে প্রায় দুই বছর। এরই মধ্যে ঘর গুছিয়ে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চলছে প্রস্তুতি। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির পর্যালোচনাও শুরু হয়েছে।

খোদ দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি বগুড়ার আদমদীঘিতে জনসভায় এ আহ্বান জানান।

এ ছাড়া ২৩ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় দলের সভাতেও তিনি এমপিদের আগামী নির্বাচনের জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে এমপিদের আমলনামা।

বিতর্কিত এমপি ও নেতাদের সতর্ক হতে পরামর্শের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে কঠিন বার্তা। এ ছাড়া মাঠ গোছাতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সফর করছেন। এমপিরাও নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষের কথা শুনছেন, তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নের কথা। চাইছেন নৌকা মার্কায় ভোট। এদিকে এ তোড়জোড়ে পিছিয়ে নেই সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে এখনই তৃণমূল থেকে হাইকমান্ডে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান মতে সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনের এখনো ১ বছর ৯ মাস সময় হাতে রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বিভিন্ন বৈঠকে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন মাথায় রেখে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী বাছাইয়ে আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এজন্য সরকারি ও দলীয় গোয়েন্দাদের একাধিক টিম কাজ করছে। এসব গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরাসরি যাবে দলের হাইকমান্ডের কাছে। ইতোমধ্যে বর্তমান এমপি ও আসনভিত্তিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আমলনামাভিত্তিক একাধিক প্রতিবেদন জমাও পড়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

দলের নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতা বলেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এখন দল গোছানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দলের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা একটি কার্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ের পাশে আলাদা একটি ভবনে এ কার্যক্রম চলবে। বৃহৎ পরিসরে এ কার্যালয় থেকে নির্বাচনী সব কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এজন্য আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। ভবিষ্যতেও আসবে।’ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। গণসংযোগ করছেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরছেন। মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

এদিকে নির্বাচনের আগে দলের তৃণমূলে ঐক্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলে চিঠি দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চিঠিতে দলীয় কোন্দল নিরসনের তাগিদ দিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে আর কোনো কমিটি বিলুপ্ত কিংবা কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েকজন এমপিকে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় ধানমন্ডিতে ডেকে তাদের সংশোধন হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ১০ জন এমপিকে সতর্ক করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যেককে দুটি করে বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে দলে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি কার্যালয়ে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির কাজ শুরুর নির্দেশনা দেন। এরপরই দলীয় এক বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, তিন মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।

নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের দল। প্রতিটি রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে, তারা অবশ্যই নির্বাচন ঘিরেই সবকিছু চিন্তাভাবনা করে। দুই বছর কোনো কথা নয়। একটি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরই আরেকটি নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ থাকে। দল হিসেবে আমাদের যে উদ্দেশ্য, আমাদের যে আদর্শ, তা বাস্তবায়ন করার জন্য নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং নির্বাচন সম্পর্কে দুই বছর নয়, সব সময় আমাদের প্রস্তুতি থাকা উচিত। নেত্রীর নির্দেশে আমরা তৃণমূলে দলকে সংগঠিত করছি।’



মন্তব্য চালু নেই