ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

নির্বাচনী ঢেউ সারা দেশে

বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পরপরই সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ঢেউ উঠেছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো পুরোদমে শুরু করেছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগ আগামী সোমবারের মধ্যে তৃণমূলকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বহিষ্কার করা হবে। পৌর নির্বাচনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সুসংগঠিতভাবে কাজ শুরু করেছে দলটি। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এ নির্বাচনে কারচুপির আশংকা করলেও সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের ময়দানে থাকবে। পাশাপাশি কারচুপি হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ উন্মোচিত হবে বলেও মনে করছে দলটি। তারাও তৃণমূলের সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নমনীয় থাকবে।

সোমবারের মধ্যে প্রার্থীর তালিকা চায় আ’লীগ

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথম ধাপের নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত হবে শুক্রবার। ওই দিন গণভবনে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূল থেকে পাঠানো সুপারিশ এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জরিপ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

এজন্য ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউনিয়ন থেকে সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাসহ চিঠি জেলা ও উপজেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এ প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় প্রতীক নিয়ে মাঠে নামছেন। এ কারণে দলীয়ভাবেই প্রার্থী চূড়ান্ত করছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। তবে মেম্বার পদে নির্বাচন করার জন্য দলের মনোনয়ন লাগবে না।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে এমন প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। কারণ ওই দিনের মধ্যে দলের মনোনয়নের চিঠিসহ আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। এত কম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের রাতে বলেন, ‘ডিফিকাল্ট বাট নট ইমপসিবল।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কোনো একজনের জন্য দলীয় মনোনয়নের চিঠি জমা দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের সুযোগ ছিল। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে দলের চিঠিসহ মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। পরে চিঠি জমা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবারই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের বিষয়ে তৃণমূলকে চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

চিঠি পাওয়ার আগেই তৃণমূলে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। দলের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তুতি শুরু করেছি। আজ চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সুপারিশকৃত প্রার্থীদের নামের তালিকা পাব বলে আশা করছি।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা জনগণের সঙ্গে আছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে না তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এদের মনোনয়ন দিলে ভোট পাওয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পৌর মেয়র আলমগীর শাহী সুমন শুক্রবার রাতে বলেন, সোমবারের মধ্যে প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠানোসংক্রান্ত কেন্দ্রের নির্দেশের বিষয়ে তারা অবগত। আগামীকাল এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা রোববার সন্ধ্যা অথবা পরের দিন এখানকার দলীয় প্রার্থীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠাব। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’

দলের শৃংখলা রক্ষা ও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পৌর নির্বাচনে শৃংখলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িত এবং বিদ্রোহীরা মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারবেন না। এমনকি বিতর্কিত ব্যক্তিদেরও মনোনয়ন দেয়া হবে না। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাদের বহিষ্কার করা হবে। শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এমন কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করা হয়। সেখানে ইউপি নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, তৃণমূলকে ১৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের দফতর থেকে পাঠানো এক চিঠিতে জেলা ও উপজেলা কমিটিকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানোর ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এবং যে ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠিত হবে। ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের সঙ্গে বর্ধিত সভা করে একজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশকৃত নাম উল্লিখিত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী বোর্ড (৬ জনের নাম ও স্বাক্ষর) প্রার্থী চূড়ান্ত করে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সোমবারের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে (বাড়ি-৫১/এ, সড়ক-৩/এ, ধানমণ্ডি আ/এ, ঢাকা) দফতর বরাবর প্রেরণ করবে।’

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মনোনীত প্রার্থীর নাম (ভোটার নং ১২ ডিজিট) এবং নির্বাচনী আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা অনুযায়ী সব তথ্য প্রার্থীর নামের সঙ্গে প্রেরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রার্থীর ভোটার আইডির ফটোকপি অবশ্যই প্রেরণ করতে হবে- যা বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ মনোনয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ও প্রতীক বরাদ্দ করবে।’

তফসিল অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২ মার্চ। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২২ মার্চ। সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের পর দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচনকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে শাসক দল। পৌরসভায় সাফল্য পাওয়ার পর বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ উপলক্ষে সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নমনীয় বিএনপি

ভোট কেন্দ্র দখল, কারচুপি ও জাল ভোটসহ নানা অনিয়মের শঙ্কা করলেও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ইউপিতে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তৃণমূলকে। বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সর্বসম্মতভাবে যে সুপারিশ দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে এসব নেতা যদি একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে তা পর্যায়ক্রমে জেলা কমিটি ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা হস্তক্ষেপ করবেন। এতেও যদি একক প্রার্থী নিশ্চিত না হয়, তখন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হস্তক্ষেপ করবেন। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, সেক্ষেত্রে সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনের মতো নির্বাচনের আগ মুহূর্তে অতি প্রয়োজনে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর যদি নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে বহিষ্কার না করে ‘নীরব দর্শক’র ভূমিকায় থাকবে দলটি।

আরও জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নের প্রত্যয়নের ক্ষমতা দেয়া হতে পারে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহানকে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কবে নাগাদ কেন্দ্রে পাঠাতে হবে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। তবে দু’একদিনের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সূত্র মতে, সদ্যসমাপ্ত পৌরসভার মতো এবারও কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিমের পাশাপাশি একাধিক মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। তবে এ টিমের সংখ্যা এবার বেশি হতে পারে। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সমন্বয়ে এসব কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের দুই দিন আগে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তাদের অভিযোগ- অনেক ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সংকটে পড়তে পারে বিএনপি। কারণ কোথাও কোথাও নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই এসব খবর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানানো হচ্ছে তৃণমূল থেকে।

বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইউপি বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক- এই পাঁচজন যৌথভাবে প্রার্থীর নাম অনুমোদন করার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করবে। তবে দলের পক্ষে কে অনুমোদনপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ হবেন, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান রিজভী। দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আন্দোলনের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান রিজভী।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন ও উপজেলা নেতাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষমতা দল দিলেও আগ্রহী প্রার্থীরা ছুটছেন এলাকার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অথবা জেলা বিএনপির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকসহ প্রভাবশালী নেতাদের বাসা বা অফিসে। কোথাও কোথাও জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার কয়েকজন নেতা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে দেখা করে এমন অভিযোগ করেছেন। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, তৃণমূল যাকে মনোনয়ন দেবে, সে-ই চূড়ান্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাহলে আমার প্রশ্ন, ইউনিয়ন বা উপজেলা কমিটি কী তৃণমূলের মতামতে হয়েছিল? ওই সব কমিটি তো জেলা বা এলাকার সাবেক সংসদ সদস্যদের বাইরে যেতে পারবেন? তারা তো স্বাধীন না। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। সেখানে প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। এ বিষয়ে কেন্দ্র সতর্ক না হলে যোগ্যরা প্রার্থী হতে পারবেন না। গত পৌর নির্বাচনেও এ ধরনের পৌর নির্বাচনেও এমন অভিযোগ উঠেছিল।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নির্বাসনে। সারা দেশে ভয়াবহ দমনপীড়ন ও ভোটারদেও ভোট প্রদানের অধিকার কেড়ে নেয়ার আশঙ্কা থাকলেও সেই ক্ষুদ্র পরিসর সম্প্রসারিত করার আন্দোলন হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন সমাজে সংঘাত ছড়াবে বলে আমরা মনে করি। গণতন্ত্রের পথচলাকে বিপথে চালিত করার জন্যই সরকারের মদদে নির্বাচন কমিশন এই অযৌক্তিক ও অসময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের দুই দিন আগে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে ‘অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে রিজভী বলেন, একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করা এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞ বিষয়। নির্বাচন পরিচালনাও এক ব্যাপক কর্মকাণ্ড। উভয় বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকবে। দলের কাউন্সিলের পরের দিন পৌরসভা ও দ্বিতীয় দিন পর ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করি।

জানা গেছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জোটগতভাবে না যাওয়ার পক্ষে দলের বেশির ভাগ নেতা। বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গ এড়িয়ে চলার পক্ষে তারা। একই মনোভাব দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। বিএনপি নেতারা মনে করেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করা সম্ভব হবে।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এবারও পৌরসভার মতো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে দলটি। দলের হাইকমান্ড মনে করে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনই হবে না। সর্বশেষ পৌর নির্বাচন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তারপরও দলকে নির্বাচনমুখী করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিতর্কিত ভূমিকা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতেই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি মনে করে, সরকার চায় বিএনপি নিজে থেকেই অনুষ্ঠেয় নির্বাচনগুলোতে অংশ না নিক, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই তারা নির্বাচন নিয়ে এমন তামাশা করছে। জেনেশুনে সে সুযোগ সরকারকে দিলে বিএনপিই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিএনপি নির্বাচনে থাকা মানেই সরকারের ভুল-ত্র“টি জাতির সামনে প্রকাশ পাওয়া। এতে করে ক্ষমতাসীন দলের সচেতন নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়বে। ধীরে ধীরে তারা আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তবে দলটির একটি ক্ষুদ্র অংশ মনে করছেন, যে নির্বাচনের ফল পূর্বনির্ধারিত, যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো লক্ষণই থাকে না, সেই নির্বাচনে না যাওয়াটাই ভালো।

জানা গেছে, পৌর নির্বাচনে যেসব দুর্বলতা ফুটে উঠেছিল, তা যেন ইউপি নির্বাচনে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে বিএনপি। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূল নেতাদের কার কী ভূমিকা, দলের প্রতি আনুগত্য ও আন্তরিকতা, যোগ্যতা ও দক্ষতার বিষয়টি আমলে নিয়ে ইউপি নির্বাচনে পোলিং এজেন্টসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হবে। আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পৌর নির্বাচনে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেয় আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেমন হবে। বরং ইউপি নির্বাচন ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই; বরং আরও খারাপ হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এক পায়ে খাঁড়া আছে। এ নির্বাচনের ফলাফলও পূর্বনির্ধারিত হয়ে আছে। তারপরও নির্বাচনকে সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও আন্দোলনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা তৃণমূলের বিএনপি নেতাকর্মীরা পৌর ভোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জেগে উঠেছে। মাঠে নামলেই হামলা বা গ্রেফতার তৃণমূলের এ ধারণা পৌর ভোটে তার অনেকটাই দূর হয়েছে। মাঠ নেতাদের মধ্যে স্বাভাবিক রাজনীতি করার সাহস ফিরে এসেছে। আসন্ন ইউপি ভোটে অংশ নেয়ার মাধ্যমে এ গতিশীলতা আরও বাড়াবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের নামে পুলিশের একাধিক মামলা আছে। এসব মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই