রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ডে

নিরীহদের আটক ও হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তথ্য উদ্‌ঘাটনের নামে পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ আটকের পর নিরীহ মানুষকে নির্যাতন ও হয়রানি করছে।
ড. শফিউলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে যে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনকে জানিয়ে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন, তাদেরই গ্রেফতার করে ওই পরিবারকে ভীতসন্ত্রস্ত করেছে পুলিশ।

হত্যার স্থানসংলগ্ন বাড়ির ওই পরিবারের সদস্যরা বরং হত্যাকা-ের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারতেন। তাদের সহযোগিতা নিয়ে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু পুলিশ চলেছে উল্টো পথে। পুলিশের এই কা-জ্ঞানহীন তৎপরতা দেখে স্থানীয়রা মন্তব্য করছেন, ঘটনা দেখে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখে চুপ থাকাই শ্রেয়। নতুবা ওই পরিবারের মতোই বিপদে পড়তে হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাচ্ছে।

১৫ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং মতিহার থানা পুলিশের সদস্যরা সন্দেহভাজন অর্ধশত ব্যক্তিকে আটক করে। এরপর গত ১৭ নভেম্বর সোমবার হত্যা মামলায় ১১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। পুলিশ তাদের রিমান্ডের আবেদন জানায়। আদালত আজ বুধবার রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক শফিউল ইসলাম হত্যাকা-ের পর ১৬ নভেম্বর মামলা দায়ের হলেও এখনো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকে শুরু করে গত সোমবার পর্যন্ত অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই নিরীহ প্রকৃতির বলে দবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

তাদের বক্তব্য, পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আটকে ব্যর্থ হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। এমনকি তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনও করেছে। ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে রেখে তাদের মাত্র দুবার খেতে দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামি বা চার্জশিটে নাম দেওয়ার কথা বলে এবং রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের পথ প্রশস্ত করে রাখছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, শিক্ষক শফিউল হত্যাকা-ের পরে পুলিশ নানামুখী চাপ সামালাতেই গণগ্রেফতার শুরু করে। সেই ধারাবহিকতায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত এখন পর্যন্ত প্রকৃত কোনো খুনিকে পুলিশ ধরতে না পারলেও নিরীহ মানুষদের আটকের নামে হয়রানি ও আটকবাণিজ্য করে চলেছে।
এদিকে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ড. শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করতে পারেনি। ড. শফিউল হত্যাকাণ্ড জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গিদের কাজ। হামলা এবং নৃশংসতার ধরন দেখে তা প্রমাণিত হয়েছে।’

এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইউনূস এবং ড. এস তাহেরকে একই কায়দায় খুন করা হয়েছে। একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বর্বরতা থেকে রেহাই পাননি ছাত্রমৈত্রী এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অথচ জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তারা সাধারণ নিরীহ মানুষকে আটক করে নিজেদের দায় লুকানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ফজলে হোসেন বাদশা।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অপরদিকে পুলিশ যে ১১ ব্যক্তিকে ড. শফিউল হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে তারা হলেন- মহানগরীর বিনোদপুর এলাকার ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ও স্থানীয় জামায়াত নেতা হুমায়ূন কবীর, কলেজের শিক্ষক মোশারফ হোসেন, রাজশাহী নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, দুর্গাপুরের মাদ্রাসা শিক্ষক ফজলুল হক, ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির মালিক মশিউর রহমান ও তার ভাই হাসিবুর রহমান। এদের ছয়জনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।

এ ছাড়া বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতার করে মতিহার থানা পুলিশ। এরা হলেন- আরিফ, সাগর, জিন্নাহ, রেজাউল করিম ও সাইফুদ্দীন। এই পাঁচজনের সবারই বয়স ২০ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
শিক্ষক শফিউল ইসলাম খুন হন ব্যবসায়ী মতিউর রহমান যে বাড়িতে থাকেন তার পেছনে। হত্যাকাণ্ডের সময় ছিলো ১৫ নভেম্বর সোমবার ২টা ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। এসময় তিনি এবং তার দুই ভাই হাসিবুর রহমান ও মশিউর রহমান বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ছিলেন মতিউর রহমানের স্ত্রী রাশেদা বেগম এবং তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে ফারহানা রহমান। এসময় তারা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন।

ফারহানা জানান, খেতে বসার পরপরই তিনি ও তার মা চিৎকার শুনতে পান। এরপর তিনি দ্রুত জানালার কাছে গিয়ে দেখতে পান, ড. শফিউল ইসলাম রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তবে তিনি সেসময় হামলাকারীদের দেখতে পাননি। এসময় শফিউল ইসলামের একটি পা মোটরসাইকেলের নিচে ছিল। এ অবস্থা দেখে ফারহানা দ্রুত বাড়ি থেকে বিহাসের মোড়ে যান এবং সেখানে অবস্থানরত লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
তিনি আরো জানান, একই সময় তিনি তার বাবা মতিউর রহমান এবং তার দুই চাচা হাসিবুর রহমান ও মশিউর রহমানকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। বিষয়টি জানার পর তারা তিনজনই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসেন। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ড. শফিউল ইসলামকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মতিউর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন ঘণ্টা অতিবাহিতের পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই স্বপন কুমারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম আমাদের বাড়িতে আসে। এরপর এসআই স্বপন কুমার জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমার দুই ভাই হাসিবুর ও মশিউরকে মহানগর গোয়ন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যান।

আমরা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওসি আমাদের আশ্বস্ত করেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ১৫ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর বিকেলে তাদের আটক করা হলেও এর দুদিন পর ১৭ নভেম্বর বিকেলে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
মতিউর রহমান আরো বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে হাসিবুর দুবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা দুই দফায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করান। হাসিবুর ডায়াবেটিসের রোগী।

এ ছাড়া আরেক ভাই মশিউর রহমান দুবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এর কারণ সম্পর্কে মতিউর রহমান বলেন, ১৫ নভেম্বর বিকেলে আটকের পর তাদের দুজনকে ২৪ ঘণ্টা পর ১৬ নভেম্বর বিকেলে খেতে দেওয়া হয়। খাবার না পেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া মানসিকভাবে তাদের নির্যাতন করা হয় এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয় দেখানো হয়।
মতিউর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন আমাকে এবং আমার স্ত্রী ও মেয়েকে মতিহার থানায় ডাকেন। তার কথামতো মতিহার থানায় যাই। এরপর আমাদের তিনজনকে তিন ঘরে রেখে পৃথকভাবে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমাদের পরের দিন বিকেল চারটা পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয়। এসময় আমাদের কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। এমনকি পানি চেয়েও পাইনি। খাবার না পেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত ছিলেন, মতিহার থানার ওসি আলমগীর, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) উপপুলিশ কমিশনার নাহিদুজ্জামান এবং আরএমপিএর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে ওই কর্মকর্তার নাম ও পরিচয় জানতে পারিনি।

মতিউর রহমান আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডের পূর্বে দুপুরে একটি বিয়ের দাওয়াতে আমি এবং মতিহার থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসার ছিলাম। বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে আমিই প্রথম ওসি আলমগীরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করি। এরপরেও তিনি (ওসি) জেনেশুনে আমাকে এবং আমার স্ত্রী-মেয়েকে যে নির্যাতন ও হয়রানি করছেন, তা অমানবিক। আমি এর বিচার প্রার্থনা করছি।
অন্যদিকে আর যেসব ব্যক্তিদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের সম্পর্কেও বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এদের মধ্যে একজন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সদরের ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ফজলুল হক। তিনি ১৬ নভেম্বর রোববার বিকেলে মোটরসাইকেলে একজন কাঠমিস্ত্রিসহ রাজশাহী মহানগরীতে আসছিলেন ফার্নিচার কিনতে। এরপর মহানগরীর বিনোদপুর এলাকায় মতিহার থানা পুলিশ তাকে আটক করে এবং ওই কাঠমিস্ত্রিকে ছেড়ে দেয়। এই ফজলুল হককেও শিক্ষক শফিউল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
১৭ নভেম্বর সোমবার বিকেল ৫টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ের সামনেই ফজলুর রহমানের স্ত্রী হীরা বেগম কোলে ৫ বছরের এক কন্যা শিশুকে নিয়ে ঘুরছিলেন স্বামীর মুক্তির আশায়। হীরা বেগম বলেন, আমার স্বামী নির্দোষ। আটকের পরে পুলিশ ছেড়ে দিব, ছেড়ে দিব করে আমাদের বসিয়ে রাখে। কিস্তু তাকে ছাড়া হয়নি। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালতে পাঠানোর আগের মুহূর্তে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা মশিউর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেন, তিনি যে বাড়িতে থাকেন তার পাশেই খুন হন শিক্ষক শফিউল ইসলাম। তিনি তখন পাশেই ইটভাটাতে ছিলেন। পরে বাড়ি থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসেন। আহত শিক্ষককে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় অন্য লোকজনের মতো তিনিও সহযোগিতা করেছেন। পরে তাকেসহ তার ভাই হাসিবুরকে আটক করে নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। কিন্তু ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। তারপরেও তাদের ওই মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
হানগরীর এমবি ইটভাটার মালিক মশিউর রহমান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনেই গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নানাভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিবারকেই পুলিশ এখন উল্টো ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমরা চাই, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচার হোক। এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কিন্তু পুলিশ প্রকৃত খুনিদের না ধরে আমাদেরকে ধরে নিয়ে এসেছে।

আটক হওয়া অপর এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শনিবার রাতেই তাকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আরেক ব্যক্তি জানান, রোববার তাকে আটক করে মতিহার থানা পুলিশ। আটকের পর তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। না হলে শিক্ষক শফিউল হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে চালান দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন মতিহার থানার এক এসআই। পরে পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী ওই পরিমাণ টাকা দেওয়ায় তাকে আর আসামি করা হয়নি।

এদিকে মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। একটি সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন এসআই হিসেবে রাজশাহী মহানগরীর চারটি থানায় দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে পোস্টিং নিয়ে আছেন। এরপর তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পান।

গোয়েন্দা পুলিশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং আটকবাণিজ্যের অভিযোগে কোর্ট পরিদর্শক হিসেবে তাকে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ঊর্ধ্বতনমহলকে ‘ম্যানেজ’ করে মতিহার থানায় ওসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাজশাহীতে আর কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এতো দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারেন নি। এর ফলে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ওসি আলমগীরের খুঁটির জোর কোথায়?
প্রচার রয়েছে, ওসি আলমগীর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে (আরএমপি) থাকার সময় দেশের বহুল আলোচিত সন্ত্রাসীদের গডফাদার প্রয়াত এরশাদ শিকদারের ‘ডান হাত’ ছিলেন। তিনি সে সময় এরশাদ শিকদারের বহু অপকর্মে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সহায়তা করেছেন বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ আছে।

অপরদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবদুল মজিদ বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয়। যাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই। এদের জিজ্ঞাসাবাদেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে ঘটনার মূল আসামিদের গ্রেফতারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ওসি এর কোনো উত্তর দেননি। আটকের নামে হয়রানি ও বাণিজ্যের কথাও অস্বীকার করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

অপরদিকে ড. শফিউল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রীকন্যাকে নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা সঠিক নয়। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার প্রশ্নই ওঠে না।
আটক বাণিজ্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, কাকে আটক করা হবে বা কাকে ছাড়া হবে, তা ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশেই করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চৌদ্দপায়া এলাকায় নিজের বাসার কাছে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন অধ্যাপক শফিউল। পরে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক বাদী হয়ে মতিহার থানায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের নামে একটি মামলা করেন।



মন্তব্য চালু নেই