নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনে গণমাধ্যম কর্মীরা অগ্রনী সৈনিক ও মুল চালিকা শক্তি

সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা জাতির বিবেক। জাতির যে কোন ক্রান্তি লগ্নে তারা জাতিকে পথ প্রদর্শকের ভুমিকা পালন করে আসছে। গণমাধ্যম কর্মীরা কর্পোরেট হাউজে চাকুরী করলেও বিবেক এর তাড়নায় বর্তমান সময়ে দেশের চলমান ভেজাল বিরোধী অভিযান, খাদ্যে বিষ, নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, প্রশাসনকে তৎপর করাসহ পুরো জাতিকে নকল, ভেজাল, ও সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন প্রতিষ্ঠায় ক্যাব এর আন্দোলনের সাথে অগ্রনী সৈনিক হিসাবে ভুমিকা পালন করে জাতিকে পথ নির্দেশনা দিচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্যে ভেজাল, নকল, পঁচা, বাসী খাবার বিক্রি, বিভিন্ন ক্যামিকেল দিয়ে ফলমুল, পাকানো, পচনরোধ, শাক-সবজি, মাছ, মাংশ তাজা রাখার জন্য ক্ষতিকর ক্যামিকেল মিশ্রন, নকল কারখানা, মেয়াদউর্ত্তীন খাদ্যপণ্য বিক্রি, জীবন রক্ষাকারী ওষধ ও পানি বিপনণে কারসাজি ও লাইসেন্সবিহীন উৎপাদনসহ নানা অনিয়মের খবর পত্রপত্রিকা ও মিডিয়াতে প্রকাশ করে জাতিকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করছে গনমাধ্যমকর্মীরা। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগত দায়িত্বপালনে আরো প্রযুক্তি ও জ্ঞান প্রদান করা গেলে তারা জাতিকে আরো অনেক বেশী সচেতন করতে পারতেন এবং আগামী প্রজন্মকে রুগ্ন, অসুস্থ, অকর্মঠ ও পঙ্গু জাতিতে পরিনত করা থেকে রোধ করতে অনেক বেশী অবদান রাখতে পারতেন। কারন একটি সংবাদ কিভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে তার উপরই নির্ভর করছে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা ও বাঁচা মরার প্রশ্ন এবং জাতির ভবীষ্যত। ফলে দেশের কপোরেট হাউজগুলি নিজেরা মিডিয়া হাউজ প্রতিষ্ঠায় মারিয়া এবং অনেকে আবার বিজ্ঞাপন দিয়ে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে তৎপর। আর খবরের পিছনের খবর তুলে ধরা অনেক বেশী কঠিন ও জরুরী। ২২ জুন ২০১৫ তারিখে নগরীর সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এর যৌথ উদ্যোগে “ Journalist Workshop Role of Media in Food Safety and Ensuring Rights of Consumer’ শীর্ষক কর্মশালায় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরোয়ার, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ এম সরফরাজ খান চৌধুরী, FAO Food Safety Program-এর Chief Technical Advisor Dr. John Ryder, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও FAO Food Safety Program এর সিনিয়র ন্যাশনাল এডভাইজার প্রফেসর ডাঃ শাহ মুনির হোসেন, এফএও ফুড সেফটি প্রোগ্রাম এর এডভাইজর রোকেয়া খানম। আলোচনায় অংশনেন দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক, দৈনিক আজাদীর চীপ রির্পোটার হাসান আকবর, দৈনিক আমারদেশ এর মুস্তফা নঈম, কালের কন্ঠের আসিফ সিরাজ, ডৈইলী স্টার এর অরুন বিকাশ দে, ভোরের কাগজ এর স্বররূপ ভট্রাচার্য্য, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের নারী নেত্রী আবিদা আজাদ প্রমুখ।

ক্যাব বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছবেরীর সঞ্চালয়নায় কর্ম অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন FAO Food Safety Program-এর Chief Technical Advisor Dr. John Ryder, FAO Senior Advisor and Food Safety Authority of Ireland, Dublin, Ireland Ex CEO, Professor Alan Reilly, স্ব^াস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও FAO Food Safety Program এর সিনিয়র ন্যাশনাল এডভাইজার প্রফেসর ডাঃ শাহ মুনির হোসেন এবং FAO Food Safety Consultant Dr. Margarita Corrales।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দীন ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে একই সাথে রমজানের শুরুতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারমুল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিং ও ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অধিকমুল্যে বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও কোরআন-হাদিসের আলোকে ৩০ হাজার লিফলেট বিতরনসহ স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সাধারন জনগনের মাঝে সচেতনতা সৃষ্ঠিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি সাংবাদিকদের লেখনী ও প্রতিবেদনে ভেজালের খবর তুলে ধরা ও বিষয়ে জনগনকে আরো বেশী সচেতন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন জেলা প্রশাসনের ভেজাল বিরোধী কর্মকান্ডে সাংবাদিকরা সবসময় তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। তিনি আগামীতে গণমাধ্যম কর্মীরা আরো বেশী সোচ্চার হবেন এ প্রত্যাশা করেন।

কর্মশালায় আলোচকগন বলেন গণমাধ্যম এর কর্মীদের কারনে ভেজালের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তবে সংঘবদ্ধ ভেজালকারীরা ও সিন্ডিকেট এর ক্ষমতা অনেক বেশী হওয়ায় অনেক সময় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় এসমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেরা প্রভাব কাটিয়ে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে থাকে। কিছু ব্যবসায়ী বিজ্ঞাপন দিয়ে গণমাধ্যমকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। তাই দেশে ভোক্তা আন্দোলন জোরদার করার জন্য সকল স্তরের ভোক্তাদেরকে আরো বেশী সংগঠিত করতে হবে। যে কোন খাদ্য, পণ্য ও সেবা গ্রহনের পুর্বে দরদাম ও মান সম্পর্কে যাচাই করে কিনতে হবে। পণ্য ও সেবা গ্রহনের বিষয়ে গ্রাহকের পছন্দকে কোন ভাবেই যেন ব্যবসায়ীরা বিজ্ঞাপন, উপটৌকন ও বিষাক্ত ক্যামিকেল দিয়ে প্রভাবিত করতে না পারে জন্য আইনী প্রতিকার বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি জরুরী।

বক্তাগন অভিযোগ করেন কিছু মুষ্ঠিমেয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারনে দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে খাদ্য পণ্যে নকল-ভেজাল ও বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রণে পুরো দেশ ভরে গেছে। ১৬ কোটি মানুষই যেন অসুস্থ, প্রতিদিন যে কোন মানুষকে কোন না কোন ওষধ সেবন করতে হচ্ছে, এর পুরো দায়ভার খাদ্যে ভেজালের। আর ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনী নষ্ঠ, স্থুলস্বাস্থ্য, বহুমুত্র, মুত্রনালির সমস্যা, টাইফয়েডসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ খাদ্যে ভেজাল রোধ করা গেলে তার পুরোটাই রোধ করা সম্ভব হতো। তাই এখন প্রয়োজন খাদ্যে ভেজাল ও নকলের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ ও গণজাগরন আর গণমাধ্যম কর্মীরা হলো সেখানে মুল চালিকা শক্তি।



মন্তব্য চালু নেই