নিজে যাচাই করুন কিডনির সুস্থতা

শারীরিক সুস্থতায় গুরুত্বের দিক থেকে কিডনি অন্যতম। কিডনির কাজ হলো খাবার গ্রহণের পর শরীরে যেসব বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, তা রক্তপ্রবাহ থেকে ছেঁকে মূত্রথলিতে পাঠানো। রক্ত পরিষ্কার করার পর বিশুদ্ধ রক্ত আবার শরীরে সঞ্চালনের জন্য সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পাঠানো। শরীরের রক্তস্বল্পতার কারণ দূর করা। শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান অ্যাসিডের ভারসাম্য রক্ষা করা। সেই অ্যাসিড আবার শরীরে রক্তের সব উপাদানের কার্যকারিতা বজায় রাখে।

গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গে অনেক সময় নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। সমস্যাটি জটিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো পদক্ষেপের কথা ভাবতে পারি না। যার কারণে জটিলতা আরও বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে কিডনি ড্যামেজ হওয়া থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই আপনার কিডনি ভালো আছে কি না তার লক্ষণ জেনে নিজে যাচাই করে নিন।

দুর্বলতা

কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধাণ লক্ষণ হচ্ছে দুর্বলতা। আর এই দুর্বলতা আসে রক্তশূন্যতা থেকে। কিডনি ঠিকমত কাজ না করতে পারলে রক্ত ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে। যার কারণে রক্তে নতুন করে ব্লাড সেল উৎপন্ন হয় না। এছাড়াও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপ্রোটিন উৎপন্ন করতে পারে না। এই হরমোন বোন ম্যারো থেকে ব্লাড সেল উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই কয়েকদিন ধরে দুর্বলতা অনুভূত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শ্বাসকষ্ট

কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সঙ্গে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, আপনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা।

প্রস্রাবের রঙ ও রক্তক্ষরণ

কিডনির সমস্যায় প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। অকার্যকর কিডনি রেনাল টিউবের ক্ষতি করে, যা পলি ইউরিয়ার সৃষ্টি করে। এতে আপনার অধিক পরিমাণে প্রস্রাব তৈরিতে কাজ করে। তবে কিডনির অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, প্রস্রাবের পরিমাণ ততই কমবে। প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ কিংবা কমলা হয়ে যেতে পারে। অনেকের আবার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ এবং অত্যাধিক ফেনাও হতে পারে।

শরীরে চুলকানি

কিডনির সমস্যায় শরীরে প্রিউরিটাস বা চুলকানি দেখা দেয়। শরীরের রক্তে যখন বর্জ্য পদার্থ মিশতে শুরু করে তখন চুলকানির উপসর্গ দেখা দেয়। ফসফরাসযুক্ত খাবারের বর্জ্য প্রস্রাবের সঙ্গে বের হতে পারে না। যার কারণে এটি রক্তে মিশে চামড়ায় চুলকানি সৃষ্টি করতে থাকে।

দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়া

কিডনির সমস্যা আপনার দৃষ্টি ক্ষীণ হতে পারে। মানসিক অস্থিরতারও সৃষ্টি করতে পারে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা, ঝাপসা দেখার সমস্যার সৃষ্টি করে। ইউরিয়ার পরিমাণ বেশি হলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে রোগী কোমাতে পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।

অরুচি

শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। অ্যামোনিয়া রক্তে মিশে শরীরের প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। কিডনির অক্ষমতায় শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না। রক্তে অত্যাধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়া মুখে অরুচি এবং ওজন হারানোর মতো সমস্যার সৃষ্টি করে।

শরীরে ব্যথা

একটি জেনেটিক কন্ডিশনের কারণে শরীরের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে কিডনি এবং লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট বা গুটির সৃষ্টি হয়। এই সিস্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইড এক ধরনের বিশেষ টক্সিন বহন করে, যা শরীরের শিরা বা ধমনী গুলোতে ক্ষতি করতে পারে। একাধিক শিরার বা ধমনীর ক্ষতি হলে তা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে।



মন্তব্য চালু নেই