নিজের বোনকে পিটিয়ে মেরে ফেললো ভাই

১৯ বছর বয়সী তরুণী আনুম মাসিহ বিয়ে করতে চেয়েছিল তার প্রেমিককে। কিন্তু তার ভাই সাকিব মাসিহ রাজি ছিল না এ বিয়েতে। আর সে কারণেই বোনের সঙ্গে বচসা হয় তার। একপর্যায়ে বোনের গায়ে হাত তোলে সে। একপর্যায়ে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে লাঠি দিয়ে সে আঘাত করে আনুমকে। আর তাতেই মৃত্যু হয় তার।

এ ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সিএনএন। খবরে বলা হয়, আনুমের প্রেমিককে কোনোভাবেই বোনের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে রাজি ছিল না সাকিব। এ কারণেই বোনের ওপর চড়াও হয় সে। পুলিশ জানিয়েছে, ১০ই জুন সন্ধ্যায় বোনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে সাকিব। শিয়ালকোটের পুলিশি হেফাজতে থেকে সাকিব সিএনএনকে বলেন, ‘সে বিয়ে করতে চেয়েছিল। তাতে আমরা রাজি ছিলাম না। এটা নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক হচ্ছিল। সে আমার বোন। আমি তাকে মেরে ফেলতে চাইনি। ওর মৃত্যুর পর থেকেই আমি কাঁদছি।’

আনুম ও সাকিবের বাবা ইউসুফ মাসিহ জানান, তিনি নিজেও মেয়েকে তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। কারণ, দুজনের পরিবার পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। তিনি বলেন, ‘ওরা তর্ক করতে শুরু করে। এক সময়ে সাকিব আনুমকে লাঠি দিয়ে পেটায়। কিন্তু আনুমকে মেরে ফেলার ইচ্ছা তার ছিল না। আসলে পরিস্থিতি সাকিবের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। সে ক্রোধের বশে এ কাজ করেছে। সবশেষে আমার মনে হয় এটা আসলে সম্মানের বিষয় ছিল।’

তবে তার নিজের ছেলের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তবে আনুম ও সাকিবের মায়ের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘বোনকে মেরে ফেলার ইচ্ছা তার ছিল না। আমার মনে হয় যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই। হাজার হলেও তো সে আমার ছেলে।’

পাকিস্তানে নারীদের ওপর এমন সহিংসতা নতুন নয়। কেবল ‘পরিবারের সম্মানের কারণে’ই এ বছরে ২১২ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন দেশটিতে। এ তথ্য পাকিস্তানেরই মানবাধিকার কমিশনের দেয়া। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে বলা হয়ে থাকে ‘অনার কিলিং’। পরিবারের মতের বিরুদ্ধে কোনো মেয়ে বিয়ে করতে চাইলে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো মেয়ে নিজের মতো স্বাধীনভাবে চলতে চাইলেও তাদের বলি হতে হয় পরিবারের তথাকথিত সম্মানের কারণে।

সম্প্রতি এমন একটি ঘটনায় নিজের মেয়েকে গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে একজন মা। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

মাস পাঁচেক আগে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অনার কিলিংয়ে কোনো সম্মান নেই। প্রকৃতপক্ষে নৃশংস এসব হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট হয়ে তার সঙ্গে সম্মানের প্রসঙ্গকে সম্পৃক্ত করার মতো জঘন্য আর কিছু হতে পারে না।’ কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। -এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই