নিজের জন্য সোচ্চার ছাত্রলীগ, যৌন হয়রানিতে চুপ

বাংলা নববর্ষের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। অথচ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি।

শিক্ষকের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণের কারণে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সম্প্রতি বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথমে বিবৃতি দিয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় ছাত্রলীগ। এর পর ৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন এবং ১১ মে বুয়েটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ।

পরদিন বুয়েট ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এ সব কর্মসূচিতে যোগ দেন।

পয়লা বৈশাখের ঘটনায় সারা দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি শুধু নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

যৌন হয়রানির ঘটনার সময় সিটি নির্বাচনে ব্যস্ততার কারণে ছাত্রলীগ কোনো কর্মসূচি দিতে সময় পায় নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতারা।

এখন অন্যসব কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ। কিন্তু যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নারী কর্মীর ওপর পুলিশি হামালার বিষয়েও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগ নিজেরাই নিজেদের কর্মসূচি ঠিক করে। মিডিয়ার আগ্রহের ওপর ছাত্রলীগের কর্মসূচি দেওয়া হয় না। ছাত্রলীগের আরও অনেক কর্মসূচি আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান এ বিষয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগের একজন নেতা যখন স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত হন তখন কি তার জন্য আমরা কথা বলব না? আর যৌন হয়রানির বিষয়টিতে প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে।’

ছাত্রলীগের অন্তত পাচঁজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যৌন হয়রানির ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি না নেওয়ার বিষয়টি তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখেন না। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে রোষানলে পড়ার ভয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কথাও বলতে চাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন হিসেবে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবার আগে প্রতিবাদ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানির এতবড় ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মসূচি না দেওয়াটা সাংগঠনিক অদূরদর্শিতার পরিচয়।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ না করায় নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ছাত্রলীগের কাছে এমন নীরবতা আশা করেননি সাবেক নেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এম আই কে রাশেদ বলেন, যৌন হয়রানির ঘটনায় সবার আগে ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করবে এটাই প্রত্যাশিত ছিল। তারা বুয়েটের দু’জন কর্মীর জন্য কর্মসূচি পালন করতে পারে, অথচ যৌন হয়রানির ঘটনায় কর্মসূচি দেয় না। এটা ছাত্রলীগের জন্য লজ্জার।দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই