নিজামী-মীর কাশেমের রায়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিরোধী দুই নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে, এই বিচারিক কার্যক্রমে ন্যায়বিচার ও যথাযথ পদ্ধতির আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়নি।

অফিস অব দ্য উইনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের (ওএইচসিএইচআর) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭টি রায় দেয়া হয়েছে, যার বেশিরভাগই মৃত্যুদণ্ড আরোপের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।

এখন পর্যন্ত চারটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার পক্ষ থেকে। সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেন, ‘সংঘটিত অপরাধ গুরুতর হলেও এবং এমনকি কঠোরতম ন্যায়বিচারের মান রক্ষা করা হলেও যেকোনো পরিস্থিতিতেই জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে থাকে।

অতীত ইতিহাসের অপরাধ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সংকল্পের বিষয়ে আমাদের স্বীকৃতি রয়েছে তবে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) বিধি অনুযায়ী ন্যায়বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

এই ট্রাইব্যুনালের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে গুরুতর সমস্যার কথা এর আগেও জাতিসংঘের স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। এর বাইরেও আইনি সহায়তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের মধ্যে সমতাবিধান না থাকার কথা উল্লেখ করেন সামদাসানি।

বাংলাদেশ ২০০০ সালে আইসিসিপিআরের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর ১৪ অনুচ্ছেদে ন্যায়বিচারের অধিকারের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় জীবনের অধিকারের লঙ্ঘন বলে তা এই অনুচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই বাংলাদেশকে আইসিসিপিআরের বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ওএইচসিএইচআর।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিরোধী দল জামায়াত ইসলামীর দুই নেতা মীর কাশেম আলী ও মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করে ২০১৪ সালের নভেম্বরে এবং গত ৮ই মার্চ এই রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

অন্যদিকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের পরিকল্পনা, নির্দেশ দেয়া ও সংঘটনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে নিজামীকে। নিজামী তার এই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন, যার শুনানি রয়েছে রোববার। প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমাভিক্ষার বাইরে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আবেদনের আইনি প্রক্রিয়ার এটাই শেষ ধাপ।

ওএইচসিএএইচআরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করছি আদালত এটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করবেন।’
বাংলাদেশে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা এক হাজার দুইশরও বেশি। এ বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পৃথক পৃথক মামলায় কমপক্ষে ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

সামদাসানি বলেন, ‘এক ধাপ আগ বাড়িয়ে সব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও মৃতুদণ্ডের ব্যবহার স্থগিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’

এদিকে বুধবার রাতে পুরাণ ঢাকায় খুন হওয়া অনলাইন অ্যাকটিভিষ্ট নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যায়ও উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন সরকার।



মন্তব্য চালু নেই