নিজামীর রিভিউ শুনানি ৩ মে

মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার জন্য একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর করা আবেদনের শুনানি আগামী ৩ মে নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

রোববার (১০ এপ্রিল) নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত ২৯ মার্চ সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন দায়ের করেন নিজামীর আইনজীবীরা।

রিভিউতে ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। রিভিউ আবেদনে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন।

গত বুধবার (৩০ মার্চ) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল নিজামীর রিভিউ শুনানি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য একটি আবেদন করেছিলেন। আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রিভিউ শুনানির দিন নির্ধারণের আদেশের জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) নিজামী আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেছিলেন। নিজামীর পক্ষে রিভিউ আবেদন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এই রিভিউ আবেদনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

আপিল বিভাগের রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর বাহিনীর শীর্ষ নেতা নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।

চলতি বছরের ১৫ মার্চ ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

এরপর মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। পরদিন ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।

আইন অনুসারে পরোয়ানা শোনার পর ১৫ দিনের মধ্যে নিজামী আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন, যার শেষদিন ছিল আজ বুধবার (৩০ মার্চ)।

নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের দেয়া অন্য ৩টি চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবনের দণ্ডাদেশ ছিল।



মন্তব্য চালু নেই