নিখোঁজ সন্তানদের তথ্য না দিলে অভিভাবকও ফাঁসবেন!

জঙ্গিদলে তরুণদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে নেই। তবে প্রথম ধাপে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাঁদের অভিভাবকদের বেশির ভাগই পুলিশকে সন্তান নিখোঁজের বিষয়ে জানালেও এখন অভিভাবকেরা সেটা করছেন না। তাই এখন থেকে অভিভাবকেরা নিখোঁজ সন্তানদের তথ্য সজ্ঞানে না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটির অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, এ রকম একটা সিদ্ধান্তের কথা তিনি শুনেছেন। ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জানা যায়, হামলাকারী পাঁচজনই বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। এরপর দেশব্যাপী নিখোঁজ তরুণদের সন্ধান শুরু হয়। র‍্যাব প্রথমে ২৬২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করলেও পরে ৬৮ জনের একটি সংশোধিত তালিকা দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই তালিকার ১৯ জন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে দেশের বাইরে আছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। এর বাইরে ওই তালিকার কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হন। ১০ জন জীবিকার সন্ধানে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। আবার কয়েকজন মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডের কারাগারে ছিলেন, পরে দেশে ফিরেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, তরুণদের রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া এখন অনেক কমলেও ঠিকমতো তথ্য মিলছে না। সম্প্রতি কয়েকজন তরুণের জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, যাঁরা কয়েক মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তবে এই তরুণদের কয়েকজনের অভিভাবকেরা বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন। পুলিশকে তাঁদের সন্তান নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানাননি এসব অভিভাবক।

ধারণা করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে বা সামাজিক কারণে তাঁরা এমনটি করছেন। এতে কাজ করতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। কতজন নিখোঁজ হয়েছেন, এ ধারণাটা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের খোঁজ বের করাও কঠিন হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেলে তাঁর পরিবার, বন্ধু, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদি ঘেঁটে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য ওই তরুণকে আটকের বেলায় সহায়ক হয়। কিন্তু অভিভাবকেরা তথ্য না দিলে তো সমস্যা।

এ কারণে তাঁরা এখন অভিভাবকদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দুজন কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, যদি কোনো তরুণ নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর অভিভাবকেরা পুলিশকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহিত না করেন এবং পরে সেই তরুণটির সঙ্গে জঙ্গিবাদ-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, এমন ক্ষেত্রে সেসব অভিভাবকের বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হবে।



মন্তব্য চালু নেই