নিখোঁজের ২৪ দিন পর আইনজীবী পলাশ গ্রেফতার

কোহিনুর ক্যামিক্যাল কোম্পানির জুনিয়র এক্সিকিউটিভ আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আইনজীবী ২৪ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তার নিখোঁজের ঘটনায় একটি অপহরণের মামলা করেছিলেন তার মা মীরা রানী রায়। র‌্যাবের দাবি, আইনজীবী পলাশা ওই কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে গুমের নাটক সাজিয়ে ছিলেন। শুক্রবার র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এই তথ্য জানান।

র‌্যাবের দাবি, আইনজীবী পলাশ একজন প্রতারক। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানি তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলা দায়েরের পরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

এর আগে ওই আইনজীবী গত ২৯ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার মা মীরা রানী রায় তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। ৪ এপ্রিল তিনি বাদী হয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে গুম করা হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল মীরা রানী রায় ঢাকা কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘আমার ছেলে আদৌ বেঁচে আছে কিনা, তা আমি জানি না। জীবিত বা মৃত যেভাবে হোক আমার ছেলেকে ফেরত চান।’

গত ১৯ এপ্রিল তার পরিচিত আইনজীবীরা ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’ (ঢাকা বার)-এর ব্যানারে একটি মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ‘গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত কোহিনুর ক্যামিকাল কোম্পানির আইন বিভাগে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখ থেকে তিনি বিনা নোটিশে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তার সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ কোম্পানি করতে পারেনি। কোম্পানির তথ্যমতে, তার কাছে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ অনেক দলিল ও নথি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন পাওনাদার প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে দেওয়ার জন্য যে টাকা গ্রহণ করেছেন, তা থেকে ৩১ লাখ ৭ হাজার ৫০ টাকার হিসাবের গরমিল পায় কোম্পানি।’

র‌্যাব জানায়, প্রথম থেকেই টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলেন পলাশ। তিনি এ বিষয়ে তেজগাঁও উপপুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। গত ২৩ মার্চ কোম্পানি থেকে তাকে কোম্পানি অর্থ ও দলিলগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি লিগ্যাল নোটিশের কোনও জবাব না দেওয়ায় গত ৩১ মার্চ কোম্পানি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্যাট কোর্টে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪১৮ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর সি.আর ৩১৯/২০১৬। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি মামলা হওয়ায় বিষয়টি র‌্যাবের কাছে রহস্যজনক মনে হওয়ায় আমরাও তদন্ত শুরু করি। পলাশকে উদ্ধার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টায় র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। ২১ এপ্রিল রাতে র‌্যাব-২-এর একটি আভিযানিক দল তেজগাঁও থানর মনিপুরী পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে কোহিনুর ক্যামিকাল কোম্পানির টাকা আত্মসাৎকারী ও স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকায় প্রতারক অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়কে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

র‌্যাবের দাবি, ‘অ্যাডভোকেট পলাশ টাকা আত্মসাতের পর কোম্পানির মামলা দায়েরের বিষয়টি টের পেয়ে আত্মগোপনে যান। পরিবারকে দিয়ে গুমের নাটক সাজিয়ে মামলা, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করানোর চেষ্টা করেন। এতে তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে সহায়তা করেছেন। তিনি অপহৃত বা গুম হননি। এই সময়ের মধ্যে পলাশ কুমার রায় নিয়মিত বিভিন্ন কৌশলে অন্যদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।’



মন্তব্য চালু নেই