‘না খেয়ে আর কতক্ষণ, তাই ভেলায় রান্না’

‘বাড়িতে রান্না করে খাব তার উপায় নাই। না খেয়ে আর কতক্ষণ থাকি। এজন্য কলাগাছের ভেলায় রান্না করতেছি।’

বন্যার পানি কয়েকদিনে না নামায় জেলার চিলমারী উপজেলার ঠগের বাজার এলাকার মল্লিকা বেগম বুধবার সকালে ভেলার উপর চুলা জ্বালিয়ে রান্না করতে করতে প্রতিনিধিকে এ কথা বলেন।

এদিকে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও ধরলা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বসতভিটা থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ ঘরে ফিরতে পারেনি। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসীদের।

দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। অনেক পরিবার পাকা সড়ক ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে গবাদি পশুসহ মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও কাঁচা-পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের শুকিরপাড় গ্রামের কুদ্দুস আলী বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে, গরু-ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে পাঁচদিন ধরে বাঁধের ওপর আছি। এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাই নাই। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে।’

রৌমারী উপজেলার রৌমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যার পানিতে তোলিয়ে গেছে। প্রায় ৩০ হাজার পানিবন্দী মানুষের জন্য মাত্র এক মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। যা বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য হাজার হাজার মানুষ বাড়িতে ভিড় করছে।’

জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার্তদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা না থাকায় অনেক পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন জানান, বন্যার্তদের জন্য নতুন করে আরও ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা দ্রুত বিতরণ করা হবে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ১৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেলেও এখনও বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই