নারী মহাকাশচারীরা পিরিয়ডের ঝামেলা সামলান কী করে?

পৃথিবীর সর্বত্র এখন নারীর সাফল্যের পদচারনা। সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে পৃথিবীর বাইরে অর্থাৎ মহাকাশেও তাদের দেখা যাবে অহরহই। নারী মহাকাশচারীদের ব্যাপারে ভাবতে গিয়ে কখনো ভেবেছেন তারা মাসের বিশেষ সময়টায় কী করেন? মহাকাশে অবস্থানের সময়ে মানবদেহে যেসব পরিবর্তন আসে, তাতে কী নারীদের কোনো সমস্যা হয়? চলুন আজ জানি এসব প্রশ্নের উত্তর।

মহাকাশযানে কোনো গ্র্যাভিটি থাকে না, ফলে ভরশূন্য পরিবেশে মানুষের শরীর থেকে পেশী কমে যায়, হাড়ের ঘনত্বও কমে। আমাদের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম কাজে ঢিল দেয়। এই পরিবেশে চলাফেরা করার জন্য নিজের শরীরকে নতুন করে শিখতে হয় প্রত্যেক নভোচারীর। এইভাবে চিন্তা করলে নারীর ঋতুস্রাবের ব্যাপারটাতেও পরিবর্তন আসার কথা, তাই না? আসলে কিন্তু তা হয় না। কোনো রকম পরিবর্তনই আসলে আসে না এই শারীরিক প্রক্রিয়াটিতে। পৃথিবীর মতোই স্বাভাবিকভাবে তারা এই সময়টা পার করেন। ভরশূন্যতার ব্যাপারটা আসলে রক্তের প্রবাহকে থামিয়ে দেয় না বা উল্টো দিকে পরিচালিত করে না। আমাদের শরীর জানে যে এই রক্তটাকে বের করে দিতে হবে, তাই এটা শরীর থেকে নিরাপদেই বের হয়ে যায়।

নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবের ব্যাপারটাকে ইস্যু করে এক সময়ে তাদেরকে মহাকাশচারী হতে বাধা দেওয়া হতো। কিন্তু এখন আমরা জানি, এই ব্যাপারটা তাদের গবেষণার কাজে কোন বাধা তৈরি করে না। তবে এটা ঠিক যে মহাকাশের অপরিচিত পরিবেশে অনেকেই এই ঝামেলা এড়াতে চাইতে পারেন। তখন কী উপায়?

কিছু কিছু নারীর মতে, মাসিক বা পিরিয়ডকে স্বাভাবিক উপায়েই ঘটতে দেওয়া উচিৎ এবং একে বন্ধ না করে বরং তারা একে মেনে নিয়েই মহাকাশচারীর দায়িত্ব পালন করেন। অনেকেই আবার আছেন যারা পিরিয়ড বন্ধ করেই নিজেদের কাজ চালাতে চান। দুইটি কাজই তারা করতে পারেন, কোনো রকম নিয়মনীতির বাধা নেই এক্ষেত্রে। মাসিক বন্ধ করে দিলে কোনও রকম শারীরিক সমস্যা হয় না বলে দেখা গেছে। আর মহাকাশযানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটাও একটা ঝামেলা বটে।

কোনো নারী মহাকাশচারী যদি চান মহাকাশে থাকার সময়টায় তিনি পিরিয়ড বন্ধ করে রাখবেন, তাহলে সেই কাজটি করার কিছু উপায় আছে। ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল গ্রহণ করতে পারেন তিনি। সুস্থ নারীদের জন্য এই কাজটায় কোনও শারীরিক ক্ষতি হয় না। তবে যদি মিশনের দৈর্ঘ্য বেশি হয় যেমন তিন বছর, সেক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণে পিল সাথে নিয়ে যেতে হয়। এটা মহাকাশযানের ওজনের ক্ষেত্রে একটা মাথাব্যথা বৈকি। স্যানিটারি প্রডাক্টের ক্ষেত্রেও ওজনের এই ব্যাপারটা ঝামেলা তৈরি করে।

আরেকটি উপায় হলো লং-অ্যাক্টিং রিভার্সিবল কন্ট্রাসেপ্টিভ বা LARC। এগুলো হলো ইমপ্ল্যান্ট যা কিনা ত্বকের নিচে অথবা ইউটেরাসের ভেতরে স্থাপন করা হয়। এগুলো মেন্সট্রুয়েশন বন্ধ রাখার হরমোন নিঃসৃত করে ধীরে ধীরে। তবে মহাকাশে উড্ডয়ন বা অবতরণের সময়ে প্রচন্ড চাপে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটা অবশ্য ঠিক, যে এ ব্যাপারে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন।

আমাদের অজানা ব্যাপারগুলোর মাঝে আরেকটি ব্যাপার হলো প্রজননস্বাস্থ্যের ওপর মহাকাশযাত্রার প্রভাব। ১৯৯০ সালের পুরনো এক গবেষণায় দেখা যায়, নারীর উর্বরতার ওপর মহাকাশযাত্রা কোনও প্রভাব ফেলে না। কিন্তু নারীর উর্বরতা বয়সের সাথে কমে। এ কারণে মহাকাশচারী নারীরা যদি ৪১ বছর বয়সের পর সন্তান ধারণের চেষ্টা করেন তাহলে অবশ্যই সমস্যা হবে। এতে বয়সের প্রভাবের পাশাপাশি মহাকাশযাত্রার প্রভাব আছে কিনা তা বোঝা সহজ নয়।

প্রশ্ন থাকতে পারে, মহাকাশে অবস্থান করার সময়ে সন্তান ধারণ সম্ভব কিনা। এটা আসলেই চিন্তার বাইরে একটা ব্যাপার। কারণে মহাকাশের রেডিয়েশন থেকে গর্ভের বাচ্চাটিকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে না। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে স্পেস রেডিয়েশন থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা গেলে তারপরেই এ ব্যাপারে চিন্তা করা যাবে।



মন্তব্য চালু নেই