নারী নির্যাতন ঠেকাতে লাকীর নেতৃত্বে ‘প্রীতিলতা ব্রিগেড’

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ‘প্রীতিলতা ব্রিগেড’ গঠন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন, যার নেতৃত্ব দেবেন সংগঠনটিন সাধারণ সম্পাদক ‘অগ্নিকণ্ঠী’ লাকী আক্তার।

বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে যৌন হয়রানি এবং তার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশি লাঠিপেটার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি নিয়ে শনিবার ছাত্র ইউনিয়নের সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিরোধ দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পর সম্প্রতি মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজে এক শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ঘটনা তুলে ধরে বলেন, “গত কয়েকদিনে আরও বেশ কিছু যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

“তাই নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন প্রীতিলতা ব্রিগেড গঠন করেছে। এর আহ্বায়ক করা হয়েছে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তারকে। সারাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রীতিলতা ব্রিগেড গঠন করে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলব আমরা।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লাকী গণজাগরণ আন্দোলনের সময় স্লোগান দিয়ে সারাদেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তখন থেকে তাকে ‘অগ্নিকণ্ঠী’ অভিহিত করতে থাকেন অনেকে।

একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডামি রাইফেল হাতে মহড়া দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানানো সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে দেড় বছর ধরে রয়েছেন লাকী।

তার নেতৃত্বে গঠিত দলটির নামটি এসেছে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের কাতারে থাকা নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার থেকে।

নারী নিপীড়নের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সারাদেশ থেকে ১০ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নামছে, যা আগামী ১৮ মে সোমবার থেকে শুরু হয়ে ১৫ দিন চলবে।

সেই সঙ্গে সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে হাসান তারেকের সঙ্গে লাকী ছাড়াও ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম জিলানী শুভ, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন প্রমুখ।

গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্র ইউনিয়ন।

জড়িতদের গ্রেপ্তার পুলিশি ব্যর্থতার প্রতিবাদে গত ১০ মে বামপন্থি সংগঠনটি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে তাদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

ছাত্র ইউনিয়ন নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পুলিশ পুরো ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে। উচ্চ আদালতও পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছে, এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

‘আইজিপিকে ক্ষমা চাইতে হবে’

পহেলা বৈশাখে যৌন হয়রানিকে ‘দুষ্টুমি’ বলায় পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হককে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।

সংবাদ সম্মেলনে হাসান তারেক বলেন, “পুলিশ প্রধানের বক্তব্য আমাদের স্তম্ভিত করেছে। এই সংঘবদ্ধ অপরাধকে তিনি কতিপয় বালকের দুষ্টুমি বলে একটি গুরুতর অপরাধকে ধামাচাপা ও লঘু করার যে নগ্ন চেষ্টা করেছেন, তার তীব্র নিন্দা জানাই।

“অবিলম্বে তার অপুলিশীয় বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

বর্ষবরণে যোন হয়রানিতে যুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করতে পারার মধ্যে আইজিপি শহীদুল হক সম্প্রতি তার দপ্তরে এক সভায় সেদিনের ঘটনাকে ‘দুষ্টুমি’ বলেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি বলেন, “এক মাস অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন দোষীদের গ্রেপ্তার দূরে থাক বরং তাদের রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা প্রমাণ করে এই পুলিশ প্রশাসন নির্যাতকদেরই প্রশাসন।”

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজে শিশু শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিতে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান তিনি। এনিয়ে তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আচরণের সমালোচনাও করেন।

“স্কুলের প্রিন্সিপালসহ কতিপয় শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনাটিতে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন, যা নির্যাতনকে উস্কে দিবে। ওই সব শিক্ষক নামধারী প্রশাসকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাই।”



মন্তব্য চালু নেই