নারী তার যৌন চাহিদা প্রকাশ করে না, কিন্তু পুরুষ বোঝে কী করে? রহস্যটা সবাইকে অবাক করবে

সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স নামের জার্নালের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, ডেট করার সময় নারীরা যতটুকু অনুভব করেন ততটা বোঝাতে চান না৷ কিন্তু সঙ্গী পুরুষটি ঠিকই টের পেয়ে যান।

দশকের পর দশক ধরে বিজ্ঞানের বেশকিছু গবেষণার ওপর ভিত্তি করে একটা ধারণা চলে আসছে যে, পুরুষরা নারীদের ইচ্ছা ও যৌন আগ্রহ ঠিকঠাক বুঝতে পারে না। নারীদের প্লেটোনিক আগ্রহকে পুরুষরা অনেক সময়ই যৌনাকাঙ্ক্ষা ভেবে ভুল করেন, যে কারণে ডেট করতে গিয়ে হিতে-বিপরীত হয়।

২০০৮ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি রিভিউতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পুরুষরা বিপরীত লিঙ্গের আগ্রহকে মাত্রাতিরিক্ত ভেবে বসেন। এর ফলে কখনও কখনও শারীরিক সম্পর্কে যাওয়ার তাড়া দেওয়া সহ জোর জবরদস্তি করে বসেন তারা। ভুল বোঝাবুঝি ও তিক্ততায় পর্যবসিত হয় পুরো ব্যাপারটা।

সাম্প্রতিক এই গবেষণাটিতে মনোবিদ টেক্সাস ইউনিভার্সিটির ক্যারিন পেরিলাক্স এবং ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রবার্ট কুরজবান মতামত দেন যে, এতদিন পুরুষদের বোঝার অক্ষমতা নিয়ে অতিরঞ্জন করা হয়েছে। তাদের মতে, নারীরা তাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা কম বোঝান।

এর কারণ হতে পারে, হয় তারা নিজেদের প্রকৃত ইচ্ছা ঠিকমত বুঝতেই পারেন না, নয়তো অন্যরা তাদের সম্পর্কে কীভাবে ভাববেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে চান।

গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, মানুষ সাধারণত সামাজিক লেনদেন করতে গিয়ে যতটুকু আন্দাজ করার দরকার তা যথেষ্ট ভালোভাবেই করতে পারে। তারা দু’জন ৩টি সিরিজে এই গবেষণা করে দেখেন যে পুরুষরা প্রায়ই আন্দাজ করে ফেলেন নারীদের যৌন আগ্রহ কতটুকু।

প্রাথমিক পর্যায়ে, স্বাভাবিকভাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ আছে এমন ২৭১ জন পুরুষ এবং ২১৩ জন মহিলার ওপর অনলাইনে এই সমীক্ষা করা হয়। সেখানে তাদের কাছ থেকে ডেটিং-এর কিছু সাধারণ আচার-আচরণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়- ‘হাত ধরা’, ‘সাজগোজ’, ‘গোলাপ ফুল পাঠানো’, ‘ডিনার বানানো’, ‘অ্যাপার্টমেন্টে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করা’ এরকম ১৫টি আচরণ।

পুরুষদের বলে দেওয়া হয় নারীদের যৌন আগ্রহ মাপার চেষ্টা করতে, এর সুবিধার্থে তাঁদেরকে ‘চরম অনিচ্ছুক’ থেকে শুরু করে ‘চরম আগ্রহী’ পর্যন্ত একটা স্কেল দেওয়া হয়। আর নারীদেরকেও একই স্কেল দিয়ে মাপতে বলা হয় যে তাঁরা এই আচার-আচরণগুলো বিবেচনা করে পুরুষদের সঙ্গে শারীরিক মিলনে যেতে কতটুকু আগ্রহী।
এই স্টাডিটি করে গবেষকরা দেখেন যে নারীরা তাদের আগ্রহের বিষয়ে যতটা রিপোর্ট করেন, তার তুলনায় পুরুষদের রিপোর্টের সংখ্যা বেশী যেখানে পুরুষরা বলেন যে এই ১৫টি আচরণ দিয়ে তারা ধারণা করছেন যে নারীরা শারীরিক মিলনে যেতে আগ্রহী। অতএব প্রথম স্টাডিটি প্রমাণ করে যে পুরুষরা একটু বেশিই আগ্রহ ভেবে নেন।

এই গরমিলের গভীরে যাওয়ার জন্য গবেষকরা আরেক দফা স্টাডি করেন। এবার ভিন্ন একদল নারী-পুরুষদের নিয়ে আর তাদেরকে হুবহু তালিকাটি ফলাফলসহ দেওয়া হয়। নারী-পুরুষ উভয় পক্ষকেই জিজ্ঞেস করা হয় যে প্রথম স্টাডিতে নারীরা যে উত্তরগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো সম্পর্কে বিচার করতে।
পুরুষদের ধারণা এবারও কাছাকাছি ফল নিয়ে আসে। কিন্তু যখন এই নারীদের আগে অংশ নেওয়া নারীদের উত্তর বিচার করতে দেওয়া হয় তখন তাদের দেওয়া মতামতে দেখা যায়- তারা মনে করেন আগের নারীদের আগ্রহ বেশি ছিল কিন্তু প্রকাশ করেছেন কম। গবেষকদের মতে এই বেড়ে যাওয়া ফলাফলের অর্থ- এই নারীরা বলছেন যে অন্য নারীদের আগ্রহ প্রকাশ তুলনায় বেশী ছিল।

একেবারে শেষ স্টাডিতে গবেষকরা একইভাবে আরেক দল নারী-পুরুষের ওপর সমীক্ষা চালান। এবার তারা বলা ও মন থেকে চাওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকেন। কিন্তু এবার সাধারণ সমীক্ষা শেষে দেখা যায় পুরুষের জবাব একইরকম আছে।

এরপর উভয় পক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে তারা প্রথম গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নারীদের জবাব সম্পর্কে কী ভাবেন। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয় পক্ষই বলেন যে প্রথম স্টাডির নারীরা আসলে অনেকটাই চেয়েছেন কিন্তু বোঝাননি। যতটুকু যৌনাকাঙ্ক্ষা অনুভব করেছেন ততটা বোঝাতে চাননি।

গবেষকরা তখন মত দেন যে এর সবচেয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হলো পুরুষরা নারীদের যৌনাকাঙ্ক্ষা বিষয়ে প্রায় সঠিক আন্দাজ করতে পারেন। নারীরা নিজেদের যৌন আচরণ বা আগ্রহ নিয়ে এমনিতেও পুরুষদের তুলনায় কম আলাপ করেন। কিন্তু যখন নারীরা অন্য নারীর আচরণ দিয়ে মেপে দেখেন তখন তাদের আগ্রহের জায়গাটি ঠিকই ধরতে পারেন।

তবে গবেষণায় যা-ই পাওয়া যাক, গবেষকরা একটা বিষয়ে জোর দেন যে- না মানে না। কেউ না করলে অহেতুক তাকে আগ্রহী ভেবে নেওয়া একেবারেই অনুচিত।

এই স্টাডি করা হয়েছে অনুমান এবং অভিপ্রায়ের ওপর ভিত্তি করে। কাজেই আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পেরিলাক্স বলেন, ‘একজন নারী যদি ডেট করার সময় গল্প করতে করতে আপনার উরুতে হাত রাখে, এর মানে যে সে আপনার সঙ্গে শারীরিক মিলনে যেতে আগ্রহী তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায় না’।



মন্তব্য চালু নেই