নরসিংদীতে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার পুলিশ ও দুই দল গ্রামবাসীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে চারজনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

সোমবার দুপুরে জেলার রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা, হরিপুর, আমিরাবাদ, সোনাকান্দি, বীরগাও এলাকায় এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন- আমিরাবাদ গ্রামের মৃত আলতু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (৫৫) সোনাকান্দি গ্রামের মরফত আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৩৫), একই গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে মামুন (২৩) ও সালামত মিয়ার ছেলে শাহজাহান (৪০)। নিহতরা সবাই সাবেক চেয়ারম্যান হক সরকারের সমর্থক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এসময় গুলি ও প্রতিপক্ষের টেঁটার আঘাতে রায়পুরা থানার ওসি, তিন এসআই ও দুই কনস্টেবলসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৩ টেটাঁবাজকে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- রায়পুরা থানার (ওসি) আজহারুদ্দিন, উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদ মিয়া, মোজাম্মেল হক ও জিয়াউর রহমান ও জিল্লুর রহমানসহ দুই কনস্টেবল। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসি আজাহারকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।

পুলিশ ও এলকাবাসী জানায়, গত ইউনিয়ান পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে রায়পুরার নিলক্ষা ইউনিয়নে জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলাম ও পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গত সাত মাসে এই দুই গ্রুপে কমপক্ষে ১৫বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে কমবেশি তিন শতাধিক লোক হতাহত হয়। ভাংচুর করা হয় শতাধিক বাড়িঘর। লুট করা হয় গোয়ালের গরু, ধানসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র। এসব ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যন আবদুল হক সরকার গ্রেফতারও করা হয়।

এরমধ্যে গত শনিবার সকালে দুই পক্ষের সমর্থকরা আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তিন দিন ধরে দফায় দফায় চলতে থাকে সংঘর্ষ। গত দুই দিনের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়। অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সর্বশেষ সোমবার সকালে দুই পক্ষ ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ূন কবিরের উপস্থিতিতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এসময় উত্তেজিত গ্রামবাসী পুলিশের ওপর ককটেল ও টেঁটা নিক্ষেপ শুরু করেন। পুলিশ ও গ্রামবাসী ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলিসহ প্রায় তিন শতাধিক গুলি ছুঁড়েন।

সংঘর্ষে ককটেলের স্প্লিন্টারে আহত হন রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিন। টেঁটাবিদ্ধ হন রায়পুরা থানার এসআই আসাদ।

পরে নরসিংদী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। আহতদের উদ্ধার করে রায়পুরা, ভৈরব, নরসিংদী ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুঁটে যান পুলিশ সুপার আমেনা বেগম, জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম, এএসপি (হেডকোয়ার্টার) রেজুয়ান চৌধুরী, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা সাইদুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা।

পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, ‘সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের মৃত দেহ আমরা পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’



মন্তব্য চালু নেই