নবীনবরণে দাওয়াত না পেয়ে অধ্যক্ষের ওপর ছাত্রলীগের হামলা (ভিডিও)

মাদারীপুরে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ার অজুহাতে সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হিতেন চন্দ্র মণ্ডলের ওপর হামলা এবং অধ্যক্ষ ও উপাধক্ষ্যের কক্ষ ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

বুধবার দুপুরে ওই হামলার পর নিজেকে বাঁচাতে অধ্যক্ষ দ্রুত শিক্ষক মিলনায়তনে আশ্রয় নেন। কলেজের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হলে সদর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এরমধ্যে শিক্ষকরা প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন এবং কয়েকদফা শিক্ষক মিলনায়তনে হামলার চেষ্টা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হিতেন চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে অনার্সের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এটি কলেজের সার্বিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। কিন্তু ছাত্রনেতারা হঠাৎ করে আমার কক্ষে হামলা ও ভাঙচুর করে। এ সময় আমি শিক্ষক মিলনায়তনে গিয়ে আশ্রয় নেই। এরপর তারা শিক্ষক মিলনায়তনে হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা কলেজ মিলনায়তনে অবরুদ্ধ অবস্থায় বসে আছেন আর বাইরে ছাত্ররা তাদের মারধর করার জন্য মিলনায়তনের দিকে মিছিল-স্লোগান নিয়ে আসছে এবং পুলিশ তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে থাকলে শিক্ষকদের মন-মানসিকতা কেমন থাকতে পারে ধারণা করুন। প্রত্যেক শিক্ষকই মনের ভেতর থেকে কষ্ট পেয়েছেন। রাজনৈতিক ও দলীয় শক্তির কারণেই তাদের এমন আচরণ। এমন অবস্থায় মনে হয়েছিল ওরা এসে সবাইকে মেরে ফেলে যাক। অপমানে কষ্টে সবাই নির্বাক ছিলাম।’

a6a15088910581653b554572473ded74-582c64d6d7708

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ জানান, ‘কলেজে ছাত্রনেতাদের দাওয়াত না দেওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এই ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি। পারস্পরিক সহাবস্থানের কারণে বিষয়টি মনে হয় সমঝোতা হয়ে গেছে।’

কলেজের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কলেজের দোতলায় অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশের পথে এবং কক্ষের মধ্যে একাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল। এসব ক্যামেরায় ভিডিওতে হামলাকারীদের ছবি স্পষ্ট দেখা গেছে। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের বিবাদ ছাত্রলীগ পর্যায়েও বিস্তৃত। এরই ধারাবাহিকতায় এই হামলা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ এক পক্ষকে দাওয়াত দেয়নি অজুহাতে এ হামলা করা হলেও মূলত বিজ্ঞান বিভাগের একটি মাত্র অনুষদে এই নবীনবরণ অনুষ্ঠান হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ দাওয়াতের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করেনি। তবে শিক্ষার্থীদের উগ্র আচরণ, গালিগালাজ এব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুরের খবরে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

এদিকে বিকেলে এই ঘটনার প্রতিবাদে আইনগত ব্যবস্থা বা শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য শিক্ষকরা কলেজের অধ্যক্ষ হিতেন চন্দ্র মণ্ডলকে অনুরোধ করলেও অধ্যক্ষ বিষয়টি নিয়ে কোনও ধরনের আইনগত পদক্ষেপ বা শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। তিনি বিষয়টিকে এবারের মত ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষের ভাঙচুর করা সোফা, চেয়ার, টেবিলের গ্লাস ও জানালার কাঁচসহ কক্ষের কোনও কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি। একইভাবে রাখা ছিল। এ সময় কলেজর হামলার সময় সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিও সংবাদমাধ্যমকে দেখান কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে হামলাকারী সবার চেহারা ছিল স্পষ্ট।

এদিকে সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কোনও শিক্ষার্থীই হামলার ব্যাপারে এককভাবে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন অনিক জানান, তারা নাজিমউদ্দিন কলেজে হামলা বিষয়ে জানেন না। কারা এই হামলা চালিয়েছে এ বিষয়েও তারা জানেন না। তবে যারাই এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।



মন্তব্য চালু নেই