নবজাতক আইসিইউতে অভিভাবক লাপাত্তা

শিশুটির বয়স তখন ১০ দিন। চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় ধানমণ্ডির জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে। মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তির পর শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে চিকিৎসা চলতে থাকে। অথচ কয়েক দিন পরই শিশুটির অভিভাবক লাপাত্তা। এভাবে চলে গেছে ২৯ দিন। কিন্তু অভিভাবকের কোনোই খোঁজ মিলছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বিবেচনায় নিয়ে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও মস্তিষ্কে সমস্যায় আক্রান্ত ১০ দিনের শিশুটিকে গত ২৫ জানুয়ারি মুমূর্ষু অবস্থায় জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে নিয়ে আসেন অভিভাবক। হাসপাতালে ভর্তির সময় শিশুটির ওজন ছিল ৩ দশমিক ৯ কেজি। হাসপাতালের নথিতে শিশুটির বাবা হিসেবে মো. জসিম ও মায়ের নাম হিসেবে শিল্পী লেখা হয়। ঠিকানা দেওয়া হয় ধলপুর, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। সেলফোন নম্বর ০১৭১২৫৪৯২২৮ ও ০১৬২৭৭৫৫৩৯৩।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর অবস্থা জটিল থাকায় অভিভাবকদের সম্মতিতেই শিশুটিকে এনআইসিইউতে রেখে লাইফ সাপোর্টসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা হয়। ভর্তির পর থেকে রোগীর অভিভাবকরা সব সময় হাসপাতালেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের কেউ আর শিশুটির খোঁজ নিচ্ছেন না। বারবার মোবাইল ফোনে কল করেও অভিভাবকদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি ০১৯২৮৮৯৮৩৭০ নম্বর থেকে হুমকি দিয়ে একটি ফোনকল আসে হাসপাতালের সুপারভাইজার কাওসার আহমেদের নম্বরে। টেলিফোনের ওপাশ থেকে বিষয়টি কেন পুলিশকে জানানো হয়েছে প্রশ্নের পাশাপাশি এর ফল ভালো হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।

শিশুটির প্রকৃত অভিভাবকের সন্ধানে হাসপাতালের পক্ষেও ব্যাপক খোঁজখবর করা হয়। শিশুটি ভর্তির সময় দেওয়া নম্বরে কল করলে জনৈক এক ব্যক্তি জানান, শিশুটির প্রকৃত অভিভাবকের ঠিকানা হলো, ৮৮/৩ সানারপাড়, সাইনবোর্ড (ফিরোজ সাহেবের বাড়ি), যাত্রাবাড়ী। ওই ঠিকানায় হাসপাতালের পক্ষে লোক পাঠিয়ে জানা যায়, এই নামে সেখানে কেউ থাকে না।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরো জানতে পারে, ভর্তির সময় শিশুটির অভিভাবকের দেওয়া ঠিকানা আসলে ধলপুর নয়, বরং সূর্যের হাসি ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ধলপুর মাতৃসদনে শিশুটির জন্ম হয় ২১ জানুয়ারি। এরপর লোক পাঠানো হয় সেই ক্লিনিকে। দেখা যায়, সেই ক্লিনিকের নথিতে অভিভাবক শিল্পীর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ১৮ নম্বর মীরহাজিরবাগ। হাসপাতালের পক্ষে মীরহাজিরবাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেটা একটা মেস। তবে শিল্পী নামে এক মহিলা এখানে বুয়ার কাজ করতেন। তিন মাস ধরে তিনি আর কাজ করেন না।

ধানমণ্ডি থানার ওসি বুধবার জানান, তাঁরাও শিশুটির অভিভাবকের দেওয়া নম্বরে ফোন করেছেন। কিন্তু রিং হলেও কেউ ফোন ধরছে না। তাই লিখিতভাবে বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানাকে অবহিত করা হয়েছে।

জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাঈম বলেন, ‘এনআইসিইউতে চিকিৎসা ব্যয়বহুল। আমরা বুঝতে পারছি, এই শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় কেউ দেবে না। এর পরও মানবিক দিক চিন্তা করে আমরা শিশুটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আইনানুগ অভিভাবক না থাকায় আমরা কিছুটা বিপাকে পড়েছি। শিশুটিকে এখন কার হাতে তুলে দেব—এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই