নতুন সূর্যের অপেক্ষা, বর্ষবরণে প্রস্তুত দেশ

অস্ত গেছে বছরের শেষ সূর্য। কাল নতুন সূর্য কেবল নতুন দিন নয়, নিয়ে আসবে নতুন বছর ১৪২৪। ভোর থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকতা, চলবে দিন ভর।

বর্ষবরণে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজনটা থাকে রমনা বটমূলে। গানে গানে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানায় ছায়ানট। সকাল নয়টায় বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’।

সব গ্লানি, জরার অবসানে অগ্নিস্নানে ধরা হবে শুচি, বয়ে আনবে কল্যাণ। এই কামনাই থাকবে দিনটিতে। এবারের নববর্ষের আহ্বানে যোগ হয়েছে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার দেশের সবাইকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় আমরা সকলে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে অংশগ্রহণ করব, সারা দেশের মানুষের, সারা পৃথিবীর মানুষের মঙ্গল কামনা করব।’

মঙ্গল শোভাযাত্রায় কী থাকছে
বর্ষবরণ আয়োজনে ঢাকায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে। এবারের শোভযাত্রাটি অন্য বছরের তুলনায় এবারের আয়োজনটা থাকছে আরও বর্ণাঢ্য এবং জাঁকজমকপূর্ণ।

এ বছর থেকে বাংলা নববর্ষে ভিন্ন একটি মাত্রা যোগ হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে করে আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। নববর্ষ সবার জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বয়ে আনুক- এটাই কামনা করি।’

চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, ‘যেহেতু আমরা গতবছর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জন করেছি ,তাই এইবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাড়তি অনেক কিছু থাকছে। এইবারের শোভাযাত্রায় আমাদের শিল্পকর্মের সংখ্যা অনেক বেশি।’

এবারের শোভাযাত্রায় কী কী থাকছে-জানতে চাইলে নিসার হোসেন বলেন, ‘ গত ২৮ বছরে যেসব শিল্পকর্ম মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের ও সমুদ্রবিজয়ের শিল্পকর্মগুলোকে আমরা আবার এইবার শোভাযাত্রায় সংযুক্ত করছি। তাছাড়াও ফুল পাখির সংখ্যা এইবার আগের তুলনায় বেশি।’

নতুন কী থাকছে-এই প্রশ্নের জবাবে চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ‘এইবার আমরা নতুন একটি সূর্যের শিল্পকর্ম শোভাযাত্রায় রাখছি । যার একপাশ থাকবে আলো আর অন্য পাশে থাকবে অন্ধকার। আলো মানুষকে অন্ধকার থেকে মুক্তি পথ দেখাবে এবং অন্ধকার থেকে বেরিয়ে সত্যর পথে, ন্যায়ের পথে চলার আহ্বান জানানোর প্রতীক হিসেবে থাকবে আলো।’

নিরাপত্তার কড়াকড়ি
বর্ষবরণে দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা থাকবে কঠোর। কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার পর ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকায় স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া কোন গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

একইভাবে নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরণের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যারা বসবাস করেন তারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।

শাহাবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বর্ষবরণের সব আনুষ্ঠানিকতা যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারের নববর্ষে ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি, কোন ধরণের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ থাকছে।

এ ছাড়া পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বিকাল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে।

‘এবার হবে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের নববর্ষ’
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আগের দিন পুরনো বছরকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘হেফাজতিরা চায় না আমরা এই উৎসবগুলো পালন করি। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে পয়লা বৈশাখকে অনৈসলামিক বলছেন। কিন্তু আমরা তা মানবো কেন।

মেনন বলেন, ‘যেসব দুর্বৃত্ত পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আঁকা ছবিতে কালি দিয়েছে, তারা জঙ্গিদের চেয়েও ভয়ানক। কারন জঙ্গিদের কোন মুখোশ নেই, কিন্তু তাদের মুখোশ আছে। যার ফলে তাদের আমরা সহজে চিনতে পারি না।’

চৈত্র সংক্রান্তিাতে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির প্রাঙ্গণ থেকে ঘুড়ি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে রঙ বেরঙের ঘুড়ি নিয়ে শিশু কিশোর ও যুবক রা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
টিএসসি হতে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়।



মন্তব্য চালু নেই