নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উগ্রপন্থী : আরো বিপজ্জনক দিন আসছে গাজাবাসীর জন্য!

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে দেশটির উগ্রপন্থী নেতা এভিগদর লিবারম্যানকে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন পদত্যাগ করার পরই লিবারম্যানকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয় নেতানিয়াহু সরকার। আর এর পর থেকেই ভয় ও শঙ্কার মধ্যে আছে ইসরায়েল অধিকৃত গাজাবাসী। তাদের ধারণা, লিবারম্যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ায় আগের চেয়ে আরো ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে লিবারম্যান ঘোষণা করেছিলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য গাজায় চতুর্থ একটি সামরিক অভিযান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে এবং লেবাননেও তৃতীয় একটি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছে।’ এখন গাজাবাসী ভাবতে শুরু করেছে, লিবারম্যান এখন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করবে। চলতি বছরের মার্চে লিবারম্যান ঘোষণা করেছিল, ‘ফিলিস্তিনীদের বন্দী নয়, হত্যা করতে হবে।’

এর আগে ‘অপারেশন প্রোটেকটিভ এডজ’ অভিযানের মধ্য দিয়ে গাজায় নির্মম নির্যাতন আর হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল ইসরায়েল। নতুন দায়িত্ব পাওয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবারম্যান মূলত নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন জোটের একটি অংশ। কট্টর ইসরায়েলী রাজনৈতিক দল ‘ইসরায়েল বেইতেনু’র প্রধান সে। পদত্যাগের সময় মোশে ইয়ালন সকর্ত করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আরো ভয়ংকর এবং উগ্রপন্থীদের হাতে পড়েছে ইসরাইল।’ বাস্তবে হচ্ছেও তাই।

এমনিতেই ইহুদিদের বিশ্বাস করে না ফিলিস্তিনের মানুষ। কয়েকদিন আগে ফিলিস্তিনী লেখক এবং স্বাধীনতাকামী কর্মী রিফাত আলারের লিখেছেন, ‘ইহুদিদের দ্বারা আমাদের বোকা বনে যাওয়া উচিৎ না। এমনকি যারা লিবারম্যান-নেতানিয়াহু ঐক্যের সমালোচক- তাদের দ্বারাও না। তারা চায় আমাদের হত্যা করা হোক। তবে খুব নীরবে। কোনো বোমা ব্যবহার করে নয়।’

ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ঘোর বিরোধী লিবারম্যান এর আগে দুইবার পালন করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব। সামরিক বিষয়ে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই বললেই চলে। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের অন্যায় যুদ্ধের সময় নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন লিবারম্যান। নেতানিয়াহু গাজায় কঠোর অভিযান চালাচ্ছে না- এমন অভিযোগ ছিল তার।

২০০৮ সালের শেষের দিক থেকে নিয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজায় তিনটি অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। ৫১ দিনব্যাপী এসব যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ২২০০’র বেশি মানুষ। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এর মধ্যে তিনভাগের দুইভাগই বেসামরিক নাগরিক। ২০১৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসের মধ্যে গাজার কমপক্ষে ১৮ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। আর গৃহহীন হয়েছে ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।

২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। তবে এরপরও থেমে ছিল না ইহুদি দেশটি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত আরো বেশি কিছু অভিযান চালিয়ে ২৩ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে তারা।

ইসরায়েলের সব ধরনের অন্যায় আর গণহত্যার কট্টর সমর্থক লিবারম্যান। ফিলিস্তিনীদের গাজা থেকে সম্পূর্ণ বিনাশের পরিকল্পনা আছে তার। গাজা অভিযানের অংশ হিসেবে হামাস নেতাদের পরিকল্পিতভাবে গুপ্তহত্যারও সমর্থক সে। গত মাসে লিবারম্যান ঘোষণা দিয়েছিল, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে হামাসের হাতে বন্দী দুই ইসরায়েলীকে মুক্তিদানে দলটির নেতা ইসমাইল হানিয়াকে তিনি ২৪ ঘণ্টা সময় দেবেন। ২০১৪ সালের যুদ্ধে তাদের বন্দী করা হয়েছিল।

তবে লিবারম্যানের হুমকি-ধামকিতে হামাস এবং ফিলিস্তিনীরা ভয় পায় না বলে জানিয়েছেন হামাস নেতা মাহমুদ আল জাহহার। তিনি বলেন, ‘লিবার‌ম্যান যদি সত্যিকারের মানুষ হয়ে থাকে, তবে দেখি সে কী করতে পারে।’ হামাসের আরেক নেতা ফাদি হাম্মাদ জানান, লিবারম্যানের হুমকিতে ভীত নন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করবো না। তবে তা চাপিয়ে দেয়া হলে লড়াই করে যাবো।’

এদিকে লিবারম্যানকে সুযোগ সন্ধানী বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিন বিষয়ক গবেষক আদনান আবু আমের। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। আর এ কারণেই নেতানিয়াহু এবং লিবারম্যানের মতো রাজনীতিবিদরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছে।’

সব মিলেয়ে বোঝা যাচ্ছে লিবারম্যান আগামী দিনে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তগ্রহণকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। গাজাবাসীর জন্য ভালো যাবে না সামনের ‍দিনগুলো। বাকিটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে-েআসলেই কোন পথে হাঁটে লিবারম্যান।



মন্তব্য চালু নেই