নতুন পে স্কেলে যে সুবিধা পাবেন পেনশনভোগীরা

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন পে স্কেল ঘোষণা করেছে সরকার। নতুন এ স্কেল অনুযায়ী আগামী জুলাই মাস থেকেই তারা বেতন পাবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। এ দিকে, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন সরকারি কর্মচারীরা। তারা মনে করছেন, বেতন কাঠামো যখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় যাবে, প্রধানমন্ত্রী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করবেন।

কারণ, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা আর্থিক দিক থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এটি প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়ই বিবেচনায় রয়েছে। যেকোনো সময় নতুন বেতন কাঠামো মন্ত্রিসভায় যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে। নতুন বেতন কাঠামোর আওতায় সুবিধা পাবেন ২১ লাখ চার হাজার সরকারি চাকরিজীবী।

তবে পে কমিশনের সুপারিশের আলোকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল সুবিধা বাতিল করা হলে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১৩ লাখ ৭৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মন্ত্রণালয়গুলোর মোট জনবলের সংখ্যা ১৮ লাখ ২৪ হাজার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে এসেছে। সরকারি চাকরিজীবীদের অন্যান্য সুবিধার মতো কমিশনে সুপারিশ করা হয় পেনশনভোগীদের বিভিন্ন সুবিধাও।

সূত্র জানায়, পে-স্কেল পর্যালোচনা কমিটি পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১০ বছরের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর দেয়ার জন্য কমিশনের সুপারিশ অব্যাহত রেখেছে। পাঁচ বছর হলে শেষ বেতনের ২০ শতাংশ পেনশন পাবে। ২৫ বছরের ওপরে হলে পেনশন পাবে শেষ বেতনের ৯০ শতাংশ হারে। অবশ্য বিদ্যমান বেতন স্কেলে চাকরির মেয়াদ ১০ বছর না হলে পেনশনের যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। ১০ বছরের পেনশন দেয়া হতো ৩২ শতাংশ এবং ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৮০ শতাংশ হারে পেনশন দেয়ার বিধান রয়েছে।

পাঁচ বছর বা ১০ বছরের কম এক টাকায় ২৭৫ টাকা, ১০ বছর বা ১৫ বছরের কম এক টাকায় ২৬০ টাকা, ১৫ বছর বা ২০ বছরের কম এক টাকা ২৪৫ টাকা, ২০ বছর বা ঊর্ধ্বে এক টাকায় ২৩০ টাকার সুপারিশ অব্যাহত আছে। নিট পেনশন সমর্পণের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সমর্পিত ৫০ শতাংশ পেনশনের অর্ধেক হারে আনুতোষিক প্রদানের প্রচলিত নিয়ম চালু রাখার কথা বলা হয়।

এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীর মেয়াদ পাঁচ বছরের আগেই অক্ষম হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবিধার পাশাপাশি চাকরির মেয়াদের প্রতি বছরের জন্য নিজস্ব স্কেলের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ হারে এককালীন বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এ সুপারিশও অব্যাহত রাখা হয়েছে। ৬৫ বছর পর্যন্ত পেনশনভোগীর মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১৫শ’ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতা বিদ্যমান এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫শ’ টাকা করার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া অবসরভোগীর জন্য তার মাসিক নিট পেনশনের সমান দ্বিগুণ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদান। বর্তমান পেনশন গ্রহণকারী অবসরভোগীরা প্রতি বছর তাদের দু’মাসের নিট পেনশনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া নিট পেনশনপ্রাপ্ত অবসরভোগীদের নিট পেনশনের হার যে প্রক্রিয়ায় বাড়ানো হয়, অনুরূপ একশ’ শতাংশ পেনশন সমর্পণকারীদের ক্ষেত্রেও শুধু উৎসব ভাতা প্রাপ্তির জন্য নিট পেনশনের হার বাড়বে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের সিনিয়র সিটিজেন বা জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ নাগরিক কার্ড প্রবর্তন করতে পারে।

চাকরিরত একজন বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা, অক্ষমতার ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা, দাফন-কাফন অথবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণ এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই