নতুন নিয়মে স্বস্তি বাংলাদেশের বোলারদের

ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ের কিছু নিয়ম বদলানোতে ক্রিকেট বিশ্ব জুড়েই বোলারদের কণ্ঠে স্বস্তি। সেই সুরে গলা মিলিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররাও। মাশরাফি-সানি-রাজ্জাকদের মতে, এবার একটু দম ফেলার অবকাশ পাবে বোলাররা।

বারবাডোজে আইসিসির সদ্য সমাপ্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওয়ানডেতে আর ব্যাটিং পাওয়ার প্লে থাকছে না। প্রথম ১০ ওভারই শুধু থাকবে পাওয়ার প্লে। ওই ১০ ওভারে দুইজন ‘ক্লোজ ইন’ ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতাও আর নেই। আর শেষ ১০ ওভারে ৩০ গজের বৃত্তের বাইরে থাকতে পারবে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার।

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে চালু হচ্ছে নতুন নিয়ম।

আপাতত বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকা আব্দুর রাজ্জাক ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অনেক নিয়ম বদলের সাক্ষী। পাওয়ারে প্লের কয়েক দফা বদল, ফ্রি হিটের আবির্ভাব, সুপার সাবের আসা-যাওয়া, এসব অনেক নিয়ম বদলের মধ্যে খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই বাঁহাতি স্পিনারের। দুইশ’ ওয়ানডে উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের এই একমাত্র বোলার আইসিসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অবশেষে বোলারদের দিকে একটু তাকানোয়।

“গত এক যুগে যত নিয়ম হয়েছে, সব ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। মনে হচ্ছিল, ক্রিকেট খেলাটা বুঝি শুধু ব্যাটসম্যানদেরই। এখন মনে হলো, আইসিসি বোলারদের কথা অন্তত ভাবে। বোলারদের বাঁচাতে আসলে কিছু একটা করতে হতোই। কারণ খেলাটা বড্ড বেশি একতরফা হয়ে যাচ্ছিল। আর একতরফা যে কোনো কিছুই একঘেয়ে হয়ে ওঠে।”

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে আর বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ চারজন ফিল্ডার রাখার আগের নিয়মে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল স্পিনারদেরই। মাত্র চারজন ফিল্ডার বাইরে রেখে ব্যাটসমানদের আটকে রাখা কঠিন। বাংলাদেশ দলে এই কঠিন কাজটা নিয়মিতই করতে হতো রাজ্জাককে। শুরুতে বল করেছেন, ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে বল করেছেন, বল করেছেন স্লগ ওভারেও।

স্পিনারদের জন্যও রাজ্জাকের কণ্ঠে তাই স্বস্তি।

“স্পিনারদের আসলে খুব সমস্যা হচ্ছিল। উইকেট শিকারি স্পিনার ওয়ানডে থেকে হারিয়েই যাচ্ছিল, রান আটকানোর চিন্তাই করতে হতো সবাইকে। মাত্র চারজন ফিল্ডার বাইরে রাখতে পারায় ব্যাটসম্যানরা মানসিকভাবেই বাড়তি সুবিধা পেত। ইচ্ছেমত শট খেলতে ভয় পেত না। নতুন ব্যাটসম্যানও সেট হতে সময় লাগত না। নিয়ম বদলানোয় স্পিনারদের জন্য একটু হলেও ভালো হলো।”

রাজ্জাকের জায়গায় বাংলাদেশ দলে ওই কঠিন কাজটি এখন যাকে করতে হচ্ছে, সেই আরাফাত সানিও খুব খুশি।

“খুব ভালো হয়েছে। আমাদেরও এখন কিছু সুযোগ থাকছে। আমার মূলত নজর থাকে রান আটকানোয়। সেটা এখন আরও ভালো ভাবে পারব আশা করি। আর রান আটকাতে পারলে উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।”

সানির মতে, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে না থাকাটাই বড় স্বস্তি।

“ব্যাটিং পাওয়ার প্লে থেকেই অনেক সময় খেলার মোড় ঘুরে যেত। ওই সময় থেকেই ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক খেলে শেষের ১০ ওভার চালিয়ে যেত। এখন আমরা একটু বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।”

মাশরাফি মুর্তজা অবশ্য খুব বেশি উচ্ছ্বসিত নন। তবে কিছুটা স্বস্তি অবশ্যই পাচ্ছেন।

“বোলারদের খুব বেশি উচ্ছ্বাসের কিছু দেখি না। খেলাটা এখনও ব্যাটসম্যানদেরই। তার পরও আগের তুলনায় তো ভালো! একটু হলেও অন্তত বোলারদের স্বস্তি মিলবে।”

খুব বেশি উচ্ছ্বাস না থাকার কারণটাও ব্যখ্যা করলেন ওয়ানডেতে ১৯৭টি উইকেট শিকারি এই পেসার।

“আসলে উইকেটের ধরন না বদলালে লাভ নেই। বিশ্বজুড়েই এখন ওয়ানডের উইকেট মানেই নিখাদ ব্যাটিং উইকেট। বোলারদের জন্য কিছুই থাকে না। ব্যাটও এখন অত্যাধুনিক। এসব কারণে বোলারদের কাজ সবসময়ই কঠিন।”

তবে বোলার মাশরাফির এই আক্ষেপের মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তার আরেক সত্ত্বা। তিনি তো দলের অধিনায়কও! অধিনায়কের মনে পড়ল তার ব্যাটসম্যানদের কথাও।

“নিজে বোলার বলে তো শুধু বোলারদের কথা ভাবলে চলবে না। অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটসম্যানদের কথাও ভাবতে হবে। ব্যাটসম্যানদের সুবিধা একটু কমে গেল।”

তবে অধিনায়কের কাজটা একদিক থেকে একটু সহজ হল বলেও মানছেন মাশরাফি।

“এতদিন একটু বেশি ভাবতে হয়েছে। শুরুতে কে বোলিং করবে, ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে বা শেষ ১০ ওভারে কাদের দিয়ে বোলিং করাব। অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছে। এখন ওসব একটু কম করলেও চলবে।”

প্রথম ১০ ওভারে ‘ক্লোজ ইন’ ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও আক্রমণাত্মক মানসিকতার সঙ্গে আপোশ করবেন না মাশরাফি।

“ক্লোজ ইন ফিল্ডার রাখা, না রাখা আসলে নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। তবে এমনিতে স্লিপ যতজন লাগে ততজন বা ব্যাটসম্যানদের কাছাকাছি ফিল্ডার আমি শুরুতে রাখতেই চাই।”



মন্তব্য চালু নেই