নতুন জামার বদলে বাবার মরদেহের অপেক্ষায় সামিয়া-ইলমি

গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকারী হিসেবে যাদের ছবি পুলিশ দিয়েছে, তার মধ্যে একজন ওই ক্যাফের রাঁধুনী বলে তার পরিবারের দাবি। তারা বলছেন, যে পাঁচটি লাশের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের একজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার দেড় বছর ধরে ওই ক্যাফেটিরই শেফ হিসেবে কাজ করছিলেন। পাঁচজনের মধ্যে সাইফুলের পরনে যে পোশাক রয়েছে, তা শেফরাই পরে থাকেন। তা দেখে ফেইসবুকেও তাকে নিয়ে পুলিশের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। পুলিশের পাঠানো ছবি গণমাধ্যমে আসার পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা ব্যক্তিকে সাইফুল বলে শনাক্ত করেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় থাকা তার পরিবারের সদস্যরা। ক্যাফের এক কর্মচারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাফের পিজা শেফ হিসেবে কাজ করতেন সাইফুল।

প্রকাশিত ছবির সঙ্গে তার চেহারায় মিল রয়েছে।’ রবিবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেই সাইফুলের বাড়িতে প্রতিবেশীসহ শত শত মানুষের ভিড়। দুই মেয়ে সামিয়া ও ইমলিকে নিয়ে বিলাপ করছেন তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৭)। পুরো কোলকাঠি গ্রাম শোকে স্তব্ধ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে দিশেহারা সাইফুলের পরিবার।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক বছর পূর্বে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কোলকাঠি গ্রামের মরহুম হাসেম চৌকিদারের একমাত্র ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম চৌকিদার বাবুর্চির চাকরি নেন ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয়। সাইফুল এর আগে জার্মান প্রবাসী ছিলো। সেখানেও তিনি রেস্তোরাঁয় পিজা তৈরির কাজ করতেন।

সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া বলেন, আমার স্বামীর সাথে শুক্রবার বিকেলে শেষ টেলিফোনে কথা হয় স্বামী সাইফুলের সাথে। সাইফুল বলেছিল, রবিবার সকালে ঈদের ছুটিটে গ্রামের বাড়ি ফিরে এসে নড়িয়া বাজার থেকে মেয়েদের সাথে নিয়ে ঈদের নতুন জামা কিনবে। বাবা আসবে সেই পথ চেয়ে বসে আছে আমার অবুঝ ছোট দুই মেয়ে।

শনিবার টেলিভিশন দেখে জানতে পারি জঙ্গি হামলা হয়েছে। অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছে। সেই সাথে আমার স্বামীকেও মেরে ফেলেছে। আমি এখন আমার সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলবো? আমার গর্ভের সন্তান কেন তার বাবার মুখটাও দেখতে পারবে না? এ কেমন নিয়তি ? সাইফুলের বড় মেয়ে সামিয়া (৯) বলেন, আমার বাবাতো আমার ও আমার ছোট বোন ইলমির জন্য ঈদের জামা নিয়া আসবে। আমার বাবাকে কারা যেন কুপিয়ে মেরে ফেলছে। ওরা কেন মারলো?

কে আমার ঈদের জামা দিবে? আমি কেন এতিম হলাম? আমার বাবাকে এনে দাও। ছোট শিশুটির চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। এ সময় ছোট মেয়ে ইলমি( ৭) শুধুই চারদিক তাকিয়ে দেখছিল। মুখে কোন ভাষা নেই তার। এ সময় পুরো বাড়িজুড়ে চলছিল বুকফানা কান্না। একমাত্র সন্তান সাইফুলকে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন বিধবা মা সম্মেহের বেগম। স্বজনদের আহাজারিতে শোকে স্তব্ধ পুরো কোলকাঠি গ্রাম।

গ্রামের প্রতিবেশীরা জানায়, সাইফুল ইসলাম খুব ভাল মানুষ ছিল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সে। সাইফুল ছাড়া কীভাবে চলবে সংসার? তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান দেখতে পাবে না বাবার মুখ। এমন করুন মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না কেউ। স্বপ্ন ভাঙা পরিবারটি এখন শুধু করছেন মরদেহের জন্য অপেক্ষা। নতুন জামার বদলে বাবার মরদেহের অপেক্ষা করছে শিশু সামিয়া আর ইলমি। হত্যাচক্রের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার ও অসহায় এই পরিবারের জন্য সাহায্যের আবেদন করেছেন স্বজনসহ স্থানীয়রা। নড়িয়া থানার ওসি একরাম আলী বলেন, আমরা এরকম কথা শুনেছি কিন্তু আমাদেরকে এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই